আনন্দময় ঈদ পালনে তাই প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। প্রতিবছরই দেখা যায় বিপুলসংখ্যক রোগীর ঈদ পরিণত হয় বিষাদে। এ সময় হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা থাকে না।
পানিশূন্যতা
গরম আবহাওয়ায় ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়।
দেখা দেয় পানিশূন্যতা। শরীরকে হাইড্রেট রাখতে খাদ্যতালিকায় পানির পাশাপাশি এমন কিছু খাবার রাখা জরুরি, যেগুলো পানির অভাব পূরণ করবে।
১. পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করার বিকল্প নেই
২. চিড়ার পানি, চিড়া খাওয়া যেতে পারে
৩. লেবুর শরবত, আখের গুড়ের শরবত শক্তি ধরে রাখতে কার্যকর
৪. চিনি ছাড়া তরমুজ, বাঙ্গি, যে কোনো সিজনাল
৫. ফলের জুস
৬. ডাবের পানি, লাচ্ছি, ঘোল খাওয়া যেতে পারে
৭. শসা, পুদিনার জুস।
যেসব খাবার পরিহার করবেন
সুস্থ থাকতে এবং সুন্দরভাবে ঈদ পালনে অবশ্যই অতিরিক্ত গরমে নিচের খাবারগুলো পরিহার করবেন—
১. অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত বা ডুবো তেলে ভাজা খাবার
২. কোল্ড ড্রিংকস, পোলাও, কাচ্চি, অতিরিক্ত ভুনা খাবার
৩. দুধ চা, কফি, পরোটা, অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার।
রোগীদের জন্য পরামর্শ
ঈদুল আজহায় বিভিন্ন রকমের মাংসের পদের আয়োজন থাকে। গরু, খাসি, মহিষ বা উটের মতো লাল মাংসই খাওয়া হয় বেশি। এ ক্ষেত্রে কিছু রোগীকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনির রোগ, হজমে সমস্যা, ফ্যাটি লিভার, পিসিওএস সমস্যা বা যাদের ওজন বেশি, তাদের খাবারের পরিমাণ ও শরীরের ওপর প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে তবেই খেতে হবে।
ডায়াবেটিস
১. ডায়াবেটিসের রোগীরা অবশ্যই মিষ্টিজাতীয় খাবার, ডেজার্ট, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলবেন
২. প্রতিদিন খাবেন টক ফল, ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার
৩. পোলাও, বিরিয়ানি কম খাবেন; লাল চালের ভাত খাবেন
৪. গরু বা খাসির মাংসের পরিমাণ যাতে অতিরিক্ত না হয় এবং তেল বা চর্বি যেন কম থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
কিডনির রোগী
১. ঈদের আগেই পুষ্টিবিদের পরামর্শে ডায়েট চার্ট রেডি করে নিন
২. প্রোটিনজাতীয় খাদ্য; যেমন—ডাল, বাদাম, বিচি, মাংস ইত্যাদি কম খান
৩. কোনোক্রমেই অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া যাবে না
৪. রোগীর যদি পানি পানের নির্ধারিত মাত্রা থাকে, তাহলে তা মেনে চলুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাইলস
অতিরিক্ত রেড মিট খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই—
১. মাংস না খেয়ে শাক-সবজি, মাছের তরকারি, শাক, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
২. লাউ, পেঁপে, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, পটোল ইত্যাদি গরমের সবজিগুলো দিয়ে সহজপাচ্য খাবার তৈরি করুন
৩. কোরবানির ঈদে যেহেতু প্রধান খাবার মাংস, তাই এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
৪. পানির সঙ্গে তোকমা, ইসবগুলের ভুসি, চিয়া সিডস খেতে পারেন
৫. চিনি ছাড়া শরবত, ফলের রসসহ অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খেতে পারেন।
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস)
১. যাঁদের আইবিএস আছে, তাঁরা শাকজাতীয়, দুগ্ধজাত ও গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। সহজপাচ্য সব খাবার খান। সব খাবার পরিমিত খান, অতিভোজন পরিহার করুন
২. রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বেন না। খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর বিছানায় যাবেন
৩. খাওয়ার মধ্যে পানি খাবেন না, এতে হজম রসগুলো পাতলা হয়ে যায়। ফলে হজমে অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর পানি পান করুন।
মনে রাখবেন
১. মূল সমস্যাটা খাবারের পরিমাণে। একসঙ্গে তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার বেশ খেয়ে ফেলেন কেউ কেউ। ফলে হজমে সমস্যা হয়। নিজেকে সংযত করুন
২. চিনিযুক্ত কোমল পানীয় না পান করাই ভালো। চিনি ছাড়া জুস, লেবুর শরবত, বোরহানি, টক দই, পুদিনা লাচ্ছি, ডাবের পানি পান করতে পারেন
৩. নিজেকে অতিরিক্ত ক্ষুধার্ত করবেন না। তাতে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমবে
৪. খাওয়ার আগে পানি বা সালাদ, ফল ইত্যাদি কম ক্যালরির, সহজপাচ্য খাবার খেয়ে নিন। তাহলে কম খাওয়া হবে
৫. চেষ্টা করুন রাতে অতিরিক্ত মাংস না খাওয়ার।
৬. মাংসে তেল বা ঘির পরিমাণ কমিয়ে অল্প আঁচে ধীরে রান্না করলে মাংসের নিজস্ব তেল বেরিয়ে আসে। এতে স্বাদও বহুগুণ বেড়ে যায়
৭. দিনে এক বেলা মাছ খান। মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আছে, যা শরীরের জন্য খুবই জরুরি
৮. মাংস, পোলাও, বিরিয়ানি ইত্যাদি গুরুপাক খাবারের সঙ্গে প্রচুর সালাদ খাবেন। এটি হজমে সাহায্য করে। টক দই, বোরহানি, লেবুর শরবত (চিনি ছাড়া) ইত্যাদি খাবারও হজমে সহায়ক।
ব্যায়াম করতে ভুলবেন না
ঈদুল আজহায় যেহেতু মাংস খাওয়া হয় বেশি, তাই অবশ্যই হালকা ব্যায়াম বা কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে ভুলবেন না। ব্যায়াম, ইয়োগা, মেডিটেশন ইত্যাদির অভ্যাস থাকলে সেটা অব্যাহত রাখুন। মাঝেমধ্যে একটু-আধটু ঘরের কাজ করুন, শরীরকে কর্মচঞ্চল রাখুন।
মনে রাখবেন, এই গরমে কোরবানির ঈদের খাবার হতে হবে সহজপাচ্য ও পরিমিত। তাহলেই ঈদ উদযাপনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যটাও ভালো থাকবে।
লেখক: কনসালট্যান্ট ডায়েটিশিয়ান, লাইফস্টাইল মডিফায়ার, ডায়েট ও ওবেসিটি ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট, আনোয়ার খান মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বনানী, ঢাকা।