spot_img

বিদায় হজে নবীজির বিশেষ ১০ উপদেশ

অবশ্যই পরুন

হিজরি ১০ সালের জিলহজ মাসে আরাফার ময়দানে রাসুলুল্লাহ (সা.) লক্ষাধিক সাহাবির সামনে ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ দেন। যা মানবাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ সনদ। কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিদায় হজের ভাষণ থেকে বিশেষ ১০টি উপদেশ উল্লেখ করা হলো—

১. আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও তাকওয়া
রাসুল (সা.) ভাষণের শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং তাকওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের প্রভুর প্রতি তাকওয়া অবলম্বন করো, যিনি তোমাদের একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৭৪১)

২. জাহিলিয়াতের কুপ্রথা ও জাতিগত অহংকারের অবসান
নবীজি এই ভাষণে বংশ, ভাষা, জাতি কিংবা বর্ণভিত্তিক সব ধরনের বৈষম্য বাতিল করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের প্রভু এক। তোমাদের পিতা এক। কোনো আরবের ওপর অনারবের বা অনারবের ওপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কোনো সাদা মানুষের ওপর কালো মানুষের বা কালো মানুষের ওপর সাদা মানুষের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, শ্রেষ্ঠত্ব শুধু তাকওয়ার ভিত্তিতে।’ (শোআবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস : ৫১৩৭)

৩. মানবাধিকার ও মুসলমানের সম্মান রক্ষা
মানুষের নিরাপত্তা, সম্পদের নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিত্বের সম্মান রক্ষাই একটি আদর্শ সমাজের ভিত্তি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান পরস্পরের জন্য হারাম, যেমন এই দিন (আরাফাতের দিন), এই মাস (জিলহজ) এবং এই শহর (মক্কা) পবিত্র।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৭৪১)

৪. দায়িত্ব পালনের শিক্ষা
নবীজি (সা.) সেদিন বলেছিলেন, ‘তোমাদের কাছে যা আমানত রাখা হয়েছে—তা আদায় করো।’ আমাদের চাকরি, নেতৃত্ব, সম্পদ কিংবা সম্পর্ক—সবকিছু একেকটি আমানত। প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা ও বিশ্বস্ততা মুসলমানের অপরিহার্য গুণ হওয়া উচিত।

৫. নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা
নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করা এবং তাদের অধিকার রক্ষার তাগিদ দেওয়া হয়েছে এই ভাষণে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নারীদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করো। তিনি নারীর অধিকার রক্ষা, সদ্ব্যবহার এবং দাম্পত্য জীবনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন।’

হাদিসে এসেছে, ‘নারীদের ব্যাপারে আমি তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি। তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো। তারা তোমাদের সহচর। তাদের ওপর তোমাদের যে অধিকার আছে, তেমনি তাদেরও তোমাদের ওপর অধিকার আছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১২১৮)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)

৬. সুদ নিষিদ্ধ
বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) সুদের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জাহিলি যুগের সব সুদ বাতিল করা হলো। প্রথম যে সুদ আমি বাতিল করছি, তা আমার চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সুদ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১২১৮)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

৭. কোরআন ও সুন্নাহর প্রতি আঁকড়ে ধরা
তিনি জীবনের পথনির্দেশনার জন্য কোরআন ও হাদিসের ওপর অটল থাকার তাগিদ দেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা এ দুটির ওপর অটল থাকবে, ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব (কোরআন) এবং আমার সুন্নাহ।’ (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ৮৯৯)

৮. দ্বিন প্রচার
ইসলামের বার্তা প্রচার করা এবং সত্কর্মে অন্যদের উত্সাহিত করা মুসলমানের দায়িত্ব। রাসুল (সা.) তাঁর ভাষণে বলেন, ‘যারা এখানে উপস্থিত আছে, তারা যেন অনুপস্থিতদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেয়। কারণ, হতে পারে যে বার্তা গ্রহণ করবে, সে এখানে উপস্থিত ব্যক্তির চেয়ে বেশি উপকৃত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৭৪১)

৯. শয়তানের প্রতারণা থেকে দূরে থাকা
শয়তান মানুষের চিরশত্রু। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সতর্ক করে বলেন, শয়তান মানুষকে বড় গোনাহ দিয়ে ধ্বংস করতে না পারলে ছোট ছোট গোনাহের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পতনের পথে নিয়ে যায়।’
হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা গোনাহকে তুচ্ছ করে দেখো না, কেননা ছোট ছোট গোনাহও একত্রিত হয়ে পাহাড়সম হয়ে যায়।’ (তাবারানি, হাদিস : ১০৫০০)

১০. জীবনের সর্বক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা
বিদায় হজের ভাষণ ইসলামের একটি সার্বজনীন সনদ, যা তাকওয়া, সমতা, ন্যায়বিচার, নারীদের অধিকার, সুদমুক্ত জীবন এবং কোরআন ও সুন্নাহর প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা দেয়। এই ভাষণে পারিবারিক সম্পর্ক, আর্থিক লেনদেন, শাসনব্যবস্থা, নারী-পুরুষ সম্পর্ক, আখিরাতের প্রস্তুতি—সবই আলোচিত হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ

মুক্তির আগেই রেকর্ড গড়লো ‘হাউসফুল ৫’

মুক্তির আগেই বক্স অফিসে চমক দেখাতে শুরু করেছে ‘হাউসফুল ৫’ ছবি। আর মাত্র দুইদিন পরেই বড় পর্দায় মুক্তি পেতে...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ