জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজকের এই রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো।
আজ রোববার (১ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের সমন্বয়ে আপিল বিভাগের বেঞ্চ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে ইসিকে এই আদেশ দেন। এরপরই সংবাদ সম্মেলনে এসে এ কথা বলেন শিশির মনির।
তিনি বলেন, দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়ের আইনি লড়াইয়ের সফল অবসান হলো। বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী আজকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে তার নিবন্ধন ফিরে পেলো।
রাজনৈতিক উদ্দেশে দায়েরকৃত মামলার মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে আপিল বিভাগের আজকের এই রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো। আমরা আশা করি এই রায়ের পরে বাংলাদেশে সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাণবন্ত সংসদ গঠন হবে।
এ দিকে দলটি দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরে পাবে কিনা সেটিও নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে বলেও জানান আপিল বিভাগ।
আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্য দিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
২০০৮ সালে জামায়াত সাময়িক নিবন্ধন পেলেও ২০০৯ সালে শুরু হয় সেই নিবন্ধন চ্যালেঞ্জের আইনি লড়াই। বিভিন্ন ইসলামপন্থি দল ও ব্যক্তিরা হাইকোর্টে রিট করে দাবি করেন-জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংবিধানবিরোধী।
২০১৩ সালে হাইকোর্ট রায় দেন জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ। একই সঙ্গে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত তখন জামায়াতের আবেদন খারিজ করে।
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। তবে একই বছর জুলাইয়ে ছাত্রদের কোটা আন্দোলন দানা বাঁধে। এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতা সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে ফেটে পড়ে। এই বিক্ষোভের মধ্যেই ১ আগস্ট জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আওয়ামী সরকার।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। নতুন সরকারের অধীনে ২৮ আগস্ট জামায়াত নিষিদ্ধের সেই আদেশ বাতিল হয়। এরপরই আবারও আপিল বিভাগে শুনানির আবেদন করে জামায়াত। অবশেষে রোববার সেই কাঙ্ক্ষিত ‘নিবন্ধন’ ফিরে পেল দলটি।
জামায়াতের এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে এখন দেশের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা। রাজনীতির ময়দান আবারও উত্তপ্ত হতে চলেছে, তা নিশ্চিত। শুরু হলো নতুন হিসাব-নিকাশ।