চার দিনের জাপান সফরে এখন টোকিওতে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের প্রথম দিন একাধিক বৈঠক ও অনুষ্ঠানে যোগদান করেন তিনি। এক অনুষ্ঠানে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আবহ বর্ণনার পাশাপাশি ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর গল্প শোনান তিনি। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলন, দেশে সেসময়ের পরিস্থিতি বর্ণনার পাশাপাশি তার নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজের বিষয়েও আলোকপাত করেন প্রধান উপদেষ্টা।
২০২০ টোকিও অলিম্পিকের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার স্মৃতিচারণ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে একাধিক অলিম্পিকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি তাকে মশাল বাহকের মতো সম্মাননা দিয়েছে- এটিও উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জীবনে এমন কিছু ঘটে যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। প্যারিস অলিম্পিকে যুক্ত থাকার জন্য আমি সেখানেই অবস্থান করছিলাম। ঠিক তখনই আমার কাছে এমন একটি দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ আসলো, যার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমি সেটি থেকে সরে আসার চেষ্টা করলেও একের পর এক ফোন আসতেই থাকে। প্রায় ৩ দিন ধরে এটি চলার পর সার্বিক প্রেক্ষাপটে আমি সেই দায়িত্ব গ্রহণ করি।
তিনি শোনাচ্ছিলেন ৫ আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সেই সময়ে বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনের রেশ। বলেন, আমি রাজি হবার পর তাৎক্ষণিকভাবে আমাকে ফ্লাইট ধরে দেশে ফিরতে হয়, সেসময় দেশে কোনো সরকার ছিলোনা।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন পরবর্তী বাংলাদেশ এখন ‘নতুন বাংলাদেশ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আন্দোলন দমাতে এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় হত্যা করা হয়, তবুও তারা পিছু হটেনি। এক পর্যায়ে তৎকালীন সরকার বুঝতে পারে, এবং তারা সরে যায়।
‘তরুণ প্রজন্ম যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল, সেটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব চলে আসে এক পর্যায়ে, যা কঠিন ছিল। তবে আমি যখন দায়িত্ব নেই তখন পুরো জাতির ভেতর একটি দুর্দান্ত ঐক্যবদ্ধতা লক্ষ্য করি। দেশ পুরো ধ্বংস অবস্থায় ছিল, সব কিছু লুটে নেয়া হয়েছিল। প্রশাসন, অর্থনীতি, ব্যাংকিং সব সেক্টরেই দৃশ্যমান সংকট তৈরি হয়। কারণ, কোটি কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছিল। ১৫ বছর ধরে চলা দুঃশাসন, গুম, ধ্বংসযজ্ঞ মিলে দেশ এক ভয়াবহ অবস্থায় ছিল। এমন এক অবস্থায় আমাদের নতুন করে শুরু করতে হয়।’
‘প্রায় দশ মাস হলো আমরা দ্বায়িত্ব নিয়েছি। তিনটি প্রধান দায়িত্ব আমাদের, যেগুলো হলো: সংস্কার, বিচার ও সাধারণ নির্বাচন। এটি বেশ চ্যালেঞ্জিং কারণ, আগের সরকারের অনেক লোকই এখনও একই দায়িত্বে রয়েছে যারা দেড় দশক ধরে এক ধরণের কাজ করে গেছে, হুট করে তারা সেটি থেকে বের হয়ে আসবে, বা তারা সঠিক কাজই করবে, এর নিশ্চয়তা বেশ আপেক্ষিক।’
চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে বলে আবারও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। সরকারের কাজ শেষ হয়ে গেলে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
তিনি বলেন, দেশের ১৮ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকই তরুণ, যা বাংলাদেশের শক্তির জায়গা। জাপান বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্পে যুক্ত উল্লেখ করে বাংলাদেশি তরুণদের জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়েও আশা ও সম্ভাবনার বাণী শোনান প্রধান উপদেষ্টা।