আগামী সপ্তাহান্তে মেক্সিকোর কুখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থিত দুরাঙ্গো রাজ্যে দেশটির ইতিহাসে প্রথম বিচারিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা মোটেও সরল নয়। ফেডারেল জজ প্রার্থীদের তালিকায় আছেন লিওপোল্ডো শ্যাভেজ, যিনি মেথামফেটামিন পাচারের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে প্রায় ছয় বছর কাটিয়েছেন।
২০১৫ সালে ৪ কিলোগ্রামের বেশি মেথামফেটামিন মাদক পাচারের দায়ে শ্যাভেজের দণ্ড হয়েছিল। দুরাঙ্গো মেক্সিকোর ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’-এর অংশ, একটি কার্টেল-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল যেখানে গাঁজা ও আফিম উৎপাদন হয়।
শ্যাভেজের প্রার্থিতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমের সমর্থিত সেই বিতর্কিত বিচারিক সংস্কারকে, যা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে নাগরিকদের সরাসরি বিচারক বাছাইয়ের ক্ষমতা দিয়েছে। তবে সমালোচকরা সতর্ক করছেন, এটি মেক্সিকোর ভঙ্গুর আইনের শাসনকে আরও গভীর সংকটে ফেলতে পারে।
দুরাঙ্গোতে মাদক যুদ্ধের ক্ষত বেশ গভীর। এই অঞ্চল কার্টেলদের দখলে, যেখানে গাঁজা ও আফিমের চাষ হয়। ফলে শ্যাভেজের অতীত বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ফেসবুকের এক ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘আমি কখনোই নিখুঁত প্রার্থী হওয়ার দাবি করিনি। আমার লুকানোর কিছু নেই, এবং আমি আমার সাজা ভোগ করেছি।’
দুরাঙ্গো শুধু একটি উদাহরণ। হালিস্কোতে ফ্রান্সিসকো হার্নান্দেজ অপরাধ ম্যাজিস্ট্রেট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যদিও যৌন নিপীড়ন ও দুর্নীতির অভিযোগে তাকে আগেই পদচ্যুত করা হয়েছিল—এসব অভিযোগকে তিনি ‘মিথ্যা অপবাদ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
নুয়েভো লিওনে ফের্নান্দো এসকামিলা ফেডারেল ক্রিমিনাল জজ পদে প্রার্থী হয়েছেন, খোলাখুলিভাবে স্বীকার করছেন তার অতীতের কথা—তিনি হিংস্র লস জেটাস কার্টেলের আইনি উপদেষ্টা ছিলেন। তার দাবি, এক্সট্রাডিশন আইনে তার দক্ষতা ও সক্ষমতা প্রমাণ করে, খারাপ সুনাম নয়।
এসব প্রার্থিতা মানবাধিকার সংগঠন, বিচারিক সংস্থা ও আইনপ্রণেতাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। মেক্সিকান সংগঠন ডেফেনসরক্স অন্তত ২০ জন প্রার্থী চিহ্নিত করেছে যাদের অতীত অপরাধ, দুর্নীতির অভিযোগ বা কার্টেলের সাথে যোগসূত্র রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন সিলভিয়া ডেলগাডো, একজন প্রতিবাদী আইনজীবী, যিনি ২০১৬ সালে হোয়াকিন ‘এল চাপো’ গুজমানের বিচারে তার পক্ষে লড়েছিলেন এবং তাকে কারাগারে নিয়মিত দেখতে যেতেন।
ডেলগাডো তার ভূমিকা নিয়ে অনড় অবস্থানে। বলেন, ‘আমি দুর্নীতিগ্রস্ত নই। কাউকে প্রতিনিধিত্ব করাটা অপরাধ নয়। আমি আমার পেশাদার দায়িত্ব পালন করে গর্বিত।’
তবে ডেফেনসরক্সের প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল মেজা বলছেন, সরকার বিদেশী সাজা বা ক্লায়েন্টদের ইতিহাস যাচাই না করেই নির্বাচনের তাড়াহুড়ো করছে।
এই সংস্কার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সংখ্যা ১১ থেকে ৯-এ কমিয়েছে, বিচারকের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত করেছে, বয়স ও অভিজ্ঞতার ন্যূনতম শর্ত সরিয়ে দিয়েছে এবং একটি শাস্তিমূলক ট্রাইব্যুনাল চালু করেছে—যাকে সমালোচকরা ৫০,০০০ সদস্যের বিচারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য একেবারেই অপ্রতুল বলে মনে করছেন।
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেন সালাজার এটিকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে চিহ্নিত করেছেন, সতর্ক করে বলেছেন এটি বিচারিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করতে পারে।
এই অস্থিরতার মধ্যেও নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ ভোটের আগে বিতর্কিত প্রার্থীদের অপসারণ করতে অস্বীকার করেছে, শুধুমাত্র ভোটের পরে যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে, নতুন ব্যবস্থায় নির্বাচনে দাঁড়ানোর বদলে দেশটির অধিকাংশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন।