যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আমদানিকৃত সব পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছেন। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এ হুমকি দেন এবং জানান, আগামী ১ জুন ২০২৫ থেকে এই নতুন শুল্ক কার্যকর হবে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের আরও একটি নতুন মাত্রা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর আগে তিনি ইইউর অধিকাংশ পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিলেও আলোচনার সুযোগ রাখতে তা ৮ জুলাই পর্যন্ত ১০ শতাংশে সীমিত রেখেছিলেন।
আইফোনে ২৫% শুল্কের হুমকি
ট্রাম্প কেবল ইইউ নয়, অ্যাপলের পণ্য নিয়েও কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য ভারতে বা অন্য কোথাও আইফোন তৈরি করে, তাহলে অন্তত ২৫ শতাংশ শুল্ক তাদের পরিশোধ করতে হবে।
‘আমি অনেক আগেই টিম কুককে জানিয়েছি, আমি চাই অ্যাপলের আইফোন যুক্তরাষ্ট্রেই তৈরি হোক। যদি তা না হয়, তবে শুল্ক দিতে হবে,’ বলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধা নিতেই গঠিত হয়েছে’ এবং তারা ‘সবচেয়ে কঠিন বাণিজ্যিক অংশীদারদের’ একজন। “আমাদের আলোচনা এগোচ্ছে না,” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হবে, সেগুলোর ওপর কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না।’
শুল্ক নীতিতে ঝুঁকিতে বৈশ্বিক বাজার
ট্রাম্পের এই ঘোষণার প্রভাব ইতোমধ্যে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের FTSE 100 সহ ইউরোপের প্রধান স্টক মার্কেটগুলো শুক্রবার নিম্নমুখী ছিল।
বিশ্বের অনেক নেতাই আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রি এখন আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। এতে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে প্রবেশ কঠিন হবে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক বাণিজ্যে।
এই ঘোষণায় উদ্বিগ্ন ইউরোপীয় গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও। ভলভো’র প্রধান নির্বাহী হাকান স্যামুয়েলসন জানান, ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে বেলজিয়ামে তৈরি EX30 ইলেকট্রিক গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস, একটা সমঝোতা আসবে। ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্র— কারোরই স্বার্থে নয় এই বাণিজ্যবাধা।”
অ্যাপলের জবাব
আইফোনে ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির জবাবে অ্যাপল জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যেই চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে ভারতে স্থানান্তর করছে। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য বেশিরভাগ আইফোন ভারতে তৈরি হবে এবং ভিয়েতনাম আইপ্যাড ও অ্যাপল ওয়াচের উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
বাণিজ্য ঘাটতি রোধে কড়াকড়ি
ট্রাম্পের মতে, এই কঠোর শুল্ক নীতির মাধ্যমে ইউরোপের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যাবে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইইউ থেকে ৬০৫.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করলেও রপ্তানি করেছে মাত্র ৩৭০.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক নীতি বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও গাড়ি খাতে। এখন দেখার বিষয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্রাম্পের এই হুমকির কী ধরনের জবাব দেয়।
সূত্র- বিবিসি