সারাবিশ্বে তিনি সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। করতেন খুব সাধারণ জীবন যাপন। অবসর জীবনে একজন কৃষকের কাজ করতেন। শাকসবজির খামার নিজ হাতে পরিচর্যা করতেন। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ এক বছরের লড়াইয়ের পর চলতি মে মাসের শুরুতে তাঁকে প্যালিয়েটিভ কেয়ারে রাখা হয়েছিল। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি মারা গেলেন। তিনি মারা যাওয়ার আগেই জানিয়েছিলেন তার প্রিয় কুকুরের পাশে যেন সমাহিত করা হয়। করা হয়েছেও তাই। নাম তার হোসে মুজিকা। তিনি ছিলেন উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট। আজ বুধবার (১৪ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
উরুগুয়ের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ইয়ামান্দু ওরসি এক্স হ্যান্ডলে এক শোকবার্তায় বলেন, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা আমাদের কমরেড পেপে মুজিকার প্রয়াণের খবর জানাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট, রাজনৈতিক কর্মী, পথপ্রদর্শক এবং নেতা। প্রিয় বন্ধু, আপনাকে আমরা খুব মিস করব।’
বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস তাঁর ‘অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞাকে স্মরণ করেন। ব্রাজিল সরকার তাঁকে ‘আমাদের সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানবতাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করে শোক প্রকাশ করেছে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, ‘মুজিকা একটি উন্নত বিশ্বের জন্য বেঁচে ছিলেন।’ গুয়াতেমালার বার্নার্ডো আরেভালো তাঁকে ‘নম্রতা এবং মহত্ত্বের উদাহরণ’ হিসেবে তুলে ধরেছেন তাঁর শোকবার্তায়।
১৯৭২-৮৫ সালে উরুগুয়ের স্বৈরশাসনের সময় মুজিকা ১৩ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। এর অর্ধেকেরও বেশি সময় তিনি একটি ছোট্ট সেলে বন্দী ছিলেন। মাসে মাত্র কয়েকবার ব্যায়াম করার জন্য তাঁকে বাইরে বের হতে দেওয়া হতো।তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদী দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। কমিউনিস্ট ছিলেন।
২০০০ সালে সিনেটর হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশের পর উরুগুয়ের প্রথম বামপন্থী প্রেসিডেন্ট তাবারে ভাজকুয়েজের অধীনে পশুপালন মন্ত্রী হন মুজিকা। ২০০৯ সালের নভেম্বরে তিনি ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার বিতর্কিত অথচ উল্লেখযোগ্য কাজ:
তিনি গর্ভপাত ঘটানোর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে গর্ভপাত ঘটানো ছিল অপরাধ।
সমকামীদের মধ্যে বিয়ে করার আইন প্রতিষ্ঠা করেন।
গাঁজার ব্যবহার বৈধ করেন।
প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ব্যবহার করতেন না
তিনি তার জন্য নির্ধারিত রাষ্ট্রীয় প্রাসাদে থাকতেন না। মন্টেভিডিওর উপকণ্ঠে তাঁর ছোট্ট খামারে বসবাস করতেন। স্যান্ডেল পরে সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন । সস্তার ফক্সওয়াগন বিটল গাড়ি থাকলেও সাইকেল চালাতেন।
২০২৪ সালের মে মাসে মুজিকার ক্যানসার ধরা পড়ে। মুজিকার স্ত্রী লুসিয়া তোপোলানস্কি বেঁচে আছেন। গেরিলা যোদ্ধা থাকার সময় লুসিয়ার সঙ্গে মুজিকার পরিচয়। এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই। লুসিয়া জানান, ‘আমি একজন সত্যিকারের ভাল সঙ্গী হারালাম’।