spot_img

উপকারের কথা ভুলে যেতে নেই

অবশ্যই পরুন

কৃতজ্ঞতা দুই ধরনের। এক. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা। দুই. বান্দার প্রতি কৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে প্রতি মুহূর্তে তাঁর সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নানাভাবে যে অফুরন্ত নিয়ামত ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন, আজীবন তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেও শেষ করা যাবে না। তাই সর্বাবস্থায় বলতে হবে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১১১)

অন্যদিকে সৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করাও ইসলামের শিক্ষা। কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে সামান্য পরিমাণও উপকার করেন, তখন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা জরুরি। এতে একদিকে যেমন ওই ব্যক্তি আরেকজনকে সাহায্য করার ব্যাপারে উত্সাহী হবে; অন্যদিকে যিনি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলেন, তার প্রতিও ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। এজন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কারো যদি উপকার করা হয় আর সে যদি উপকারকারীকে ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ (আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন) বলে, তাহলে সে চূড়ান্ত প্রশংসা করল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৫)

কর্মগুণে মানুষ পার্থিব জীবনে প্রশংসিত বা নিন্দিত হয়। ইসলাম মানুষের প্রশংসা বা সমালোচনা উভয় ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম অনুগ্রহকারীর কৃতজ্ঞতা আদায়ে উত্সাহিত করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে (যথাযথভাবে) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২১৩৩১)

ইবনু ওমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ তোমাদের কাছে আল্লাহর নামে আশ্রয় চাইলে তোমরা তাকে আশ্রয় দেবে। কেউ আল্লাহর নামে তোমাদের কাছে কিছু চাইলে তোমরা তাকে দাও। আরো বলেন, যে ব্যক্তি তোমাদের দাওয়াত দেয় তোমরা তাতে সাড়া দাও। আর যে ব্যক্তি তোমাদের প্রতি উত্তম আচরণ করবে তোমরা তার প্রতিদান দাও। যদি তাকে দেওয়ার মতো কিছু না পাও তবে তার জন্য দোয়া করতে থাকো—যখন বুঝতে পারো তোমরা তার প্রতিদান দিয়েছ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১০৯)

তবে যে ব্যক্তি প্রকাশ্য পাপাচারে লিপ্ত, যে মানুষের ওপর অত্যাচার করে তার প্রশংসা করা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা মুনাফিককে ‘আমাদের নেতা’ বলে সম্বোধন কোরো না। কেননা সে যদি নেতা হয়, তবে তোমরা তোমাদের মহামহিম আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করলে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৭৭)

আর প্রশংসা করার ক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না। অতিমাত্রায় প্রশংসা করাকে খোশামোদ বা তোষামোদ বলে, যা পরিত্যাজ্য। তোষামুদে লোকেরা নিজের মতলব হাছিলের জন্য এমন প্রশংসা করে, যা বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটা নির্লজ্জ মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।

প্রশংসার বাড়াবাড়ি সম্পর্কে নিম্নের হাদিস প্রণিধানযোগ্য। আবু বকর (রা.) বলেন, মহানবী (সা.)-এর সামনে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির প্রশংসা করল। তখন রাসুল (সা.) বলেন, তোমার জন্য আফসোস! তুমি তো তোমার সঙ্গীর গর্দান কেটে ফেললে, তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে। তিনি এ কথা কয়েকবার বলেন, অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যদি তার ভাইয়ের প্রশংসা করতেই চায় তাহলে তার বলা উচিত, অমুককে আমি এরূপ মনে করি, তবে আল্লাহই তার সম্পর্কে বেশি জানেন। আর আল্লাহর প্রতি সোর্পদ না করে আমি কারো সাফাই পেশ করি না। তার সম্পর্কে ভালো কিছু জানা থাকলে বলবে, আমি তাকে এরূপ এরূপ মনে করি। (বুখারি, হাদিস : ২৬৬২)

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু মুসা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে অন্য এক ব্যক্তির মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করতে শুনে বলেন, তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে অথবা ব্যক্তিটির মেরুদণ্ড ভেঙে ফেললে। (বুখারি, হাদিস : ২৬৬৩)

তোষামোদকারীদের সম্পর্কে ইসলামের বিধান হলো মুখে মাটি মেরে দেওয়া। মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা অত্যধিক প্রশংসাকারীদের দেখবে, তখন তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৭৭০)

সুতরাং বান্দার প্রতি কৃতজ্ঞতা যেমন থাকতে হবে, তেমনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না।

সর্বশেষ সংবাদ

যে কারণে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানসহ ১১টি দেশে ভ্রমণে সতর্কতা দিলো সিঙ্গাপুর

দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনাপূর্ণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, ভুটান, মিয়ানমারসহ একাধিক দেশের জন্য ভ্রমণ...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ