spot_img

কোরআন পাঠে মনোযোগ ধরে রাখার উপায়

অবশ্যই পরুন

পবিত্র কোরআন দ্বারা উপকৃত হওয়ার শর্ত হলো মনোযোগ ও একাগ্রতার সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াত করা। কেননা যে মনোযোগসহ পাঠ করে কোরআন তার হৃদয়-মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং তাঁর জীবনে পরিবর্তন আছে। পবিত্র কোরআন পাঠের সময় মনোযোগ স্থির রাখার কয়েকটি উপায় নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

১. উপযুক্ত সময় নির্বাচন: কোরআন তিলাওয়াতের জন্য উপযুক্ত সময় নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সে সময়গুলোকে বেছে নেওয়া উত্তম যে সময়গুলোতে আল্লাহ ইবাদত করার তাগিদ দিয়েছেন। বুজুর্গ আলেমরা বলেন, কোরআন তিলাওয়াতের সর্বোত্তম সময় রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ তথা সাহরির সময়। এরপর যথাক্রমে ফজরের আগে ও পরের সময়, সন্ধ্যার সময়। অতঃপর দিনের যে সময়কে পাঠক নিজের জন্য উপযুক্ত মনে করবে।

২. উপযুক্ত পরিবেশে তিলাওয়াত করা : কোরআন তিলাওয়াতের সময় মনোযোগ স্থির রাখার জন্য পরিবেশ যথাযথ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে মসজিদই সর্বোত্তম স্থান। অতঃপর নিজ বাড়ির এমন স্থান যেখানে শরগোল, হৈ চৈ ও জাগতিক আলাপচারিতার শব্দ পৌঁছায় না। মনোরম বাগান ও প্রাকৃতিক পরিবেশে কোরআন তিলাওয়াত করলে সহজে মনোযোগ স্থির রাখা যায়। তবে ব্যস্ত পরিবেশে কোরআন তিলাওয়াত করা নিষদ্ধি নয়।

৩. সুন্দরভাবে বসা : কোরআন তিলাওয়াতকারীর বসার ধরনও তাঁর মনোযোগের ওপর প্রভাব ফেলে। প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, কোরআন তিলাওয়াতের সময় কিবলামুখী হয়ে তাশাহহুদের অবস্থায় বসা উত্তম। কারো এভাবে বসতে কষ্ট হলে অন্য কোনে পদ্ধতিতে বসতে পারে। শর্ত হলো, তাতে আল্লাহর কালামের প্রতি সম্মান ও বিনয় প্রকাশ পেতে হবে।

৪. বাহ্যিক পবিত্রতা : কোরআন তিলাওয়াতকারীর বাহ্যিক নাপাকি ও অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক। নারী ও পুরুষ উভয়ে সর্বপ্রকার পবিত্রতা অর্জনের পর কোরআন তিলাওয়াত করবে। উত্তম হলো, কোরআন তিলাওয়াতের জন্য নতুনভাবে অজু করা। তবে শরিয়তের বিধান হলো অজুহীন অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা যায় না, তা তিলাওয়াত ও মুখস্থ করা যায়।

৫. তিলাওয়াতের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুনাহ মুক্ত রাখা : কোরআন তিলাওয়াতে যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহূত হয় সেগুলোকে গুনাহ মুক্ত রাখা আবশ্যক। আর সেগুলো হচ্ছে জিহ্বা, কান, অন্তর ও মস্তিষ্ক। গুনাহ ত্যাগ ও তাওবার মাধ্যমে এসব অঙ্গ পবিত্র থাকে ও পবিত্র হয়।

৬. বিশুদ্ধ নিয়ত : কোরআন তিলাওয়াতের আগে নিয়ত বিশুদ্ধ করা আবশ্যক। কেননা জাগতিক উদ্দেশ্যে যে তিলাওয়াত করে আল্লাহ তাঁকে কোরআনের জ্যোতি দান করেন না। তাই তিলাওয়াতকারী কোরআন দ্বারা উপকৃত হওয়ার নিয়তে কোরআন তিলাওয়াত করবে।

৭. আউজুবিল্লাহ পাঠ করা : কোরআন পাঠ করার সময় শয়তান মানুষের মনোযোগ নষ্ট করার চষ্টো করে। তাই কোরআন তিলাওয়াতের আগে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তুমি কোরআন তিলাওয়াত করবে, তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর শরণ নেবে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯৮)

৮. বিসমিল্লাহ পাঠ করা : কোরআন তিলাওয়াতের শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করা মুস্তাহাব। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ও নেক কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে, ‘প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা বিসমিল্লাহের মাধ্যমে শুরু করা হয় না তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।’ (জামিউস সগির : ২/১৫৮)

৯. অর্থ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা : কোরআন তিলাওয়াতের সময় মনোযোগ ধরে রাখার একটি উপায় হলো তার অর্থ ও মর্ম নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা। কোরআনের অর্থ-মর্ম থেকে উদাসীন থেকে তিলাওয়াতের সময় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন। এজন্য তিলাওয়াতকারী তিলাওয়াত শেখার পাশাপাশি কোরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যাও শিখবে।

১০. আবেগ ও অনুভূতি জাগ্রত রাখা : কোরআনের প্রতি ধরে রাখার আরেকটি উপায় হলো নিজের আবেগ ও অনুভূতি জাগ্রত রাখা। তা এভাবে যে, জান্নাতের আলোচনা এলে অন্তরে জান্নাত লাভের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করা এবং আল্লাহর কাছে তা প্রার্থনা করা। শাসিত বা জাহান্নামের আলোচনা এলে অন্তরে ভয় জাগ্রত করে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। কোনো উত্তম গুণের বর্ণনা এলে তা অর্জনের প্রতিজ্ঞা করা এবং মন্দ বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা এলে তা পরিহারের প্রত্যয় ব্যক্ত করা। ঠিক যেমনটি সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের গাত্র রোমাঞ্চিত হয়, অতঃপর তাদের দেহমন বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ২৩)

আল্লাহ সবাইকে মনোযোগসহ কোরআন তিলাওয়াত করার তাওফিক দিন। আমিন।

সর্বশেষ সংবাদ

২-১ সপ্তাহে পাওয়ার হিটিং শেখা সম্ভব নয়: জুলিয়ান উড

পাওয়ার হিটিং একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া—এটি এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে আয়ত্ত করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ