যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে। গবেষণাটিতে বলা হয়, এই সংঘর্ষে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে এবং বৈশ্বিক পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।
গবেষকরা কয়েকটি দৃশ্যপট (scenario) তৈরি করেন যেখানে যুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে:
দৃশ্যপট ১: ভারতীয় সংসদে সন্ত্রাসী হামলা হয়। ভারত এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান চালায়। পাকিস্তান প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, যার জবাবে ভারতও পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগ করে।
দৃশ্যপট ২: ভারত কাশ্মীরে সরাসরি হামলা চালায়, যা দ্রুত পারমাণবিক উত্তেজনায় পরিণত হয়।
এই চিত্রগুলো গড়ে তোলা হয় ভারত ও পাকিস্তানের সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে ওয়ার্কশপের মাধ্যমে।
প্রথম দিনে: পাকিস্তান ১০টি ট্যাকটিকাল পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে।
দ্বিতীয় দিনে: পাকিস্তান আরও ১৫টি বোমা ছোড়ে, জবাবে ভারত ২০টি কৌশলগত পারমাণবিক আক্রমণ চালায়। এর পর ধীরে ধীরে উভয় দেশ তাদের সব পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করে।
এতে প্রাথমিক মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ১২.৫ কোটিতে, এবং পরে অনাহারে মারা যেতে পারে আরও বহু মানুষ।
পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. অ্যালান রোবোক বলেন, পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে বড় পরিসরে আগুন লেগে ধোঁয়া সৃষ্টি হবে, যা পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলে গিয়ে কয়েক বছর স্থায়ী হবে। এর ফলে: সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারবে না, বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা হ্রাস পাবে, কৃষি উৎপাদন কমে যাবে, তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়বে এবং বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।
পারমাণবিক অস্ত্র ও প্রতিযোগিতা
সুইডিশ এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে: পাকিস্তানের কাছে আছে প্রায় ১৬০টি পারমাণবিক বোমা ভারতের আছে প্রায় ১৫০টি। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৪০০-৫০০-তে পৌঁছাতে পারে। এছাড়া ভারতের রয়েছে পারমাণবিক ডুবোজাহাজ। পাকিস্তানও তা নির্মাণ করছে। অর্থাৎ শুধু অস্ত্রের সংখ্যা নয় প্রযুক্তিগত দিকেও প্রতিযোগিতা বাড়ছে।
ভারতের সাবেক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি মনে করেন, যদিও এই গবেষণা অনেকটাই কাল্পনিক, কিন্তু দুর্ঘটনাবশত যেকোনো সময় যুদ্ধ লেগে যেতে পারে—ভুল হিসাব, প্রতিক্রিয়া, বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকেই।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী পারভেজ হুডভাই বলেন, কাশ্মীরই হবে যুদ্ধের মূল ইস্যু। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানি সংকট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে—যুদ্ধ কি শুধু ভারত-পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ? উত্তর, না। গবেষকরা বলছেন, বিশ্বে ৯টি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, এবং যেকোনো দুটি দেশের মধ্যেই সংঘর্ষ শুরু হতে পারে। এছাড়া কোনো পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এমন কোনো দেশেও হামলা চালাতে পারে যাদের পারমাণবিক অস্ত্র নেই।
সূত্র: বিবিসি বাংলা, ইকোনমিক টাইমস।