মানব দেহের জন্য খুবই উপকারি ও ঔষধি গুণে ভরপুর ফল আমলকি। দেশীয় ফল হিসেবে এর পরিচিতি সবার কাছেই ব্যাপক। এটি দামে যেমন সস্তা ও সহজলভ্য, তেমনি এর রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। আমলকি গাছের পাতা ও ফল উভয়ই ওষুধরূপে ব্যবহার করা যায়।
এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে যা অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশী। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এ ফলের ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়া আর যে যে উপকারে আসে।
সর্দি-কাশি ও জ্বর কমাবে
আবহাওয়াজনিত কারণে এখন ঘরে ঘরে অনেকে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন।
তাই নিয়মিত আমলকি খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
স্কার্ভি দূর করবে
স্কার্ভি দাঁতের মাড়ির খুব পরিচিত একটি রোগ। সাধারণত শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। এ রোগ হলে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়িতে ঘা হওয়া, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হওয়া, চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায় এবং হাড়ের মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।
আলসার চিকিৎসায়
গ্যাস্ট্রিক বা আলসার নামটির সঙ্গে পরিচিত নন এমন লোক খুঁজে বের করা খুব কঠিন। সাধারণত লোকজন গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলতে যা বুঝিয়ে থাকেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলে পেপটিক আলসার। নিয়মিত আমলকি খেলে পেটের এই আলসার দূর হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস চিকিৎসায়
ক্ষুধামন্দা দূর করে
প্রতিবার খাওয়ার আগে মাখন ও মধুর সঙ্গে আমলকির গুঁড়া মিশিয়ে খেলে ক্ষুধামন্দা দূর হয়।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে। তাই দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ফলটি। এছাড়া চোখ লাল হওয়া, চুলকানো ও চোখ দিয়ে পানি পড়া রোধেও এটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমলকির রসের সাথে মধু মিশিয়ে পান করলে তা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
গলা ব্যথা ও ঠান্ডা দূর করে
আমলকির গুঁড়োর সঙ্গে মধু মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার খেলে তা গলা ব্যথা ও ঠান্ডা দূর করতে সাহায্য করে। দীর্ঘমেয়াদী কাশি-সর্দির জন্য আমলকির নির্যাস উপকারী।
হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে
উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকিকে অনেক বৃদ্ধি করে দেয়। আমলকি খেলে তা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে ধমনীর ব্লক খুলে দিতে সাহায্য করে। নিয়মিত আমলকি খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে থাকে।
রক্তের সুগার কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমলকিতে পলিফেনল রয়েছে যা রক্তে অক্সিডেটিভ শর্করা থেকে শরীর রক্ষা করে। এটি শরীরে ইনসুলিন শুষে নিতে সাহায্য করে যা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
দেহের চর্বি কমায়
ওজন হ্রাস করতে আমলকি সাহায্য নিতে পারেন। এটি নিয়মিত খেলে শরীরের প্রোটিনের স্তর বৃদ্ধি করে, যা দেহের চর্বি কাটতে সাহায্য করে। এটি খেলে হজম শক্তি বেড়ে যায়। ফলে মানুষ মুটিয়ে যায় না। তাই ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
হাড় মজবুত করে
আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
রক্ত পরিষ্কার করে
রক্ত পরিষ্কার করতে আমলকি বেশ কার্যকর। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীর থেকে টক্সিন উপাদান সব দূর করে দেয়। নিয়মিত আমলকি খেলে তা রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে।
চুলের যত্নে ও খুশকির সমস্যা দূর করে
আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে। চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য এটি একটি অপরিহার্য উপাদান। আমলকি খেলে শুধু চুলের গোড়াই শক্ত হয় না, চুল দ্রুত বেড়ে ওঠে। চুলকে খুশকিমুক্ত ও কম বয়সে চুল পাকা রোধে আমলকি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন সকালে মধুর সঙ্গে আমলকির রস মিশিয়ে খেলে চর্মরোগ নিরাময় হয়। তাছাড়া এটি খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং মুখের চামড়ায় কোনো দাগ পড়ে না।