গরমে শুধু ত্বক নয়, দুর্দশায় পড়ে যায় আপনার চুলও। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চুলের প্রাকৃতিক তেল শুকিয়ে দেয়। ফলে চুল হয়ে যায় রুক্ষ, প্রাণহীন আর ভঙ্গুর। আর যারা নিয়মিত চুল রঙ করেন, তাদের জন্য রোদ মানেই রঙ ফিকে হওয়ার আশঙ্কা।
এই অবস্থায় একমাত্র ভরসা, টানা যত্ন আর প্রকৃতির ছোঁয়া। ঘরে থাকা সাধারণ কিছু উপাদান দিয়েই বানাতে পারবেন এই ৮টি হেয়ার মাস্ক। এগুলো আপনাকে দেবে প্রাকৃতিক সুরক্ষা। আর চুল করবে মসৃণ এবং ঝলমলে।
১. অ্যালোভেরা ও নারকেল তেলের মাস্ক
অ্যালোভেরায় আছে এনজাইম, অ্যামিনো অ্যাসিড আর ভিটামিন এ, সি ও ই। এগুলো চুলকে গভীরভাবে ময়শ্চারাইজ করে। নারকেল তেল চুলের ভেতর ঢুকে প্রোটিন ক্ষয় রোধ করে।
ব্যবহার: ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগান। ৩০ মিনিট রেখে মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২. কলা ও মধুর রিপেয়ার মাস্ক
কলা চুলে আর্দ্রতা যোগায় এবং ইলাস্টিসিটি বাড়ায়। আর মধু প্রাকৃতিক হিউমেকট্যান্ট হিসেবে কাজ করে, চুলে আর্দ্রতা ধরে রাখে।
ব্যবহার: ১টি পাকা কলা মেখে ১ টেবিল চামচ মধু মেশান। স্যাঁতসেঁতে চুলে ৩০–৪০ মিনিট রাখুন। তারপর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
৩. দই ও অলিভ অয়েল হাইড্রেশন মাস্ক
দইয়ে আছে প্রোটিন ও ল্যাকটিক অ্যাসিড। যা স্ক্যাল্প কন্ডিশন করে ও চুল শক্ত করে। অলিভ অয়েলে আছে ভিটামিন ই ও ফ্যাটি অ্যাসিড। যা চুলে ময়শ্চার লক করে রাখে।
ব্যবহার: ১/২ কাপ দইয়ে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলে লাগান। শাওয়ার ক্যাপ পরে থাকুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৪. অ্যাভোকাডো ও ডিমের মাস্ক
অ্যাভোকাডোতে আছে হেলদি ফ্যাট, বায়োটিন ও ভিটামিন বি, ই। ডিমের প্রোটিন ও লেসিথিন ভাঙা কেরাটিন জোড়ে দেয়।
ব্যবহার: ১টি পাকা অ্যাভোকাডো ম্যাশ করে ১টি ডিম মিশান। ২৫–৩০ মিনিট চুলে রেখে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
৫. গ্রিন টি ও অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মাস্ক
গ্রিন টি-তে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা স্ক্যাল্পের জ্বালা কমায়। সেই সাথে চুল গজাতে সাহায্য করে। ভিনেগার স্ক্যাল্পের পিএইচ ব্যালেন্স করে ও শাইন আনে।
ব্যবহার: ১ কাপ গ্রিন টি ঠান্ডা করে ১ টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মেশান। শ্যাম্পুর পর এটি চুলে ঢেলে দিন।
৬. দই ও মেথির স্ক্যাল্প ট্রিটমেন্ট
দই চুলে ময়শ্চার দেয় ও স্ক্যাল্প ঠান্ডা করে। মেথিতে আছে আয়রন, প্রোটিন ও নিকোটিনিক অ্যাসিড। যা খুশকি দূর করে ও চুল পড়া কমায়।
ব্যবহার: ২ টেবিল চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পেস্ট বানিয়ে ৩ টেবিল চামচ দইয়ের সঙ্গে মেশান। ৪৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৭. ওটমিল ও দুধের স্মুদনিং মাস্ক
ওটমিলের বেটা-গ্লুকান চুলে একটি প্রোটেক্টিভ লেয়ার তৈরি করে ও স্ক্যাল্প ঠান্ডা রাখে। দুধের কেসিন ও হুই প্রোটিন ক্ষতিগ্রস্ত চুল সারায়।
ব্যবহার: ১/৪ কাপ ওটমিল দুধে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে চুলে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৮. জবা ফুল ও বাদাম তেলের গ্রোথ মাস্ক
জবা ফুল চুল পড়া কমায় ও স্প্লিট এন্ড প্রতিরোধ করে। বাদাম তেলে আছে ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম ও ওমেগা-৩। যা চুল গভীরভাবে পুষ্টি দেয়।
ব্যবহার: ২টি জবা ফুল গুঁড়া করে ২ টেবিল চামচ বাদাম তেল মিশান। চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
প্রতিটি মাস্কই চুলে সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করুন। এই প্রাকৃতিক মাস্কগুলোতেই লুকিয়ে আপনার চুলের আসল যত্ন। সূর্য যতই তেজি হোক, আপনার চুল থাকবে কোমল, ঝলমলে ও প্রাণবন্ত।