এবার বিসিবির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তিনি দাবি করেছেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই তাকে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই শ্রীলঙ্কান কোচ মনে করছেন এতে তার কোচিং ক্যারিয়ার কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে।
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বরখাস্ত করা হয় হাথুরুসিংহেকে। তবে তিনি শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ‘কোড স্পোর্টস’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিসিবিকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি। শুধু অভিযোগ তুলে আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে।’
হাথুরুসিংহে আরও জানান, বরখাস্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন। “আমার সঙ্গে সবসময় একজন ড্রাইভার ও একজন বন্দুকধারী থাকত। বরখাস্তের পর শুধু ড্রাইভার ছিল। তখনই বুঝেছিলাম, পরিস্থিতি ভালো নয়,” বলেন হাথুরুসিংহে।
টাকা তুলতে ব্যাংকে গেলে টিভিতে নিজের বরখাস্ত হওয়ার খবর দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। ব্যাংক ম্যানেজার পর্যন্ত তাকে সাবধান করে বলেন, রাস্তায় গেলে বিপদ হতে পারে। পরে এক বন্ধুর সহায়তায় টুপি ও হুডি পরে রাতের ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন সাবেক এই কোচ।
হাথুরু আরও দাবি করেন, তিনি নাসুমকে চড় মারেননি, বরং ব্যাটসম্যানদের গ্লাভস পাঠানোর জন্য পিঠে হালকা টোকা দিয়েছিলেন মাত্র। “আমি কোনো খেলোয়াড়কে আঘাত করিনি, এমনকি কখনও ঝগড়াও করিনি,” বলেন তিনি।
তার পক্ষে কথা বলেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক সহকারী কোচ নিক পোথাস এবং স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। দুজনেই অভিযোগটিকে ‘অতিরঞ্জিত ও ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন। হেরাথ বলেন, “বিশ্বকাপের সময় তার চারপাশে প্রচুর ক্যামেরা ছিল। কিছু ঘটলে প্রমাণ থাকত।” পোথাস যোগ করেন, “যারা অভিযোগ করেছেন, তাদের হয়তো ব্যক্তিগত ক্ষোভ ছিল। হাথুরু পেশাদার কোচ, এমন আচরণ করলে এতদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টিকে থাকতে পারতেন না।”
হাথুরুসিংহের মতে, তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত ছিল বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের পূর্বপরিকল্পিত পদক্ষেপ। তার ভাষায়, “আমি জানি না, গত ছয় মাসে কতগুলো সুযোগ হাতছাড়া করেছি। বিসিবি শুধু আমার চুক্তি বাতিলের চেষ্টা করেনি, তারা আমার পুরো ক্যারিয়ারটাই ধ্বংস করেছে।”
উল্লেখ্য, চন্ডিকা হাথুরুসিংহে প্রায় ছয় বছর দুই দফায় বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। যদিও তিনি মনে করছেন তার শেষটা হয়েছে দুঃখজনক ও অমানবিক।