বলিউডের অন্যতম সফল অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, মাত্রন ২৪ বছর বয়সে ক্রিকেটার নবাব মনসুর আলি খান পতৌদিকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তখন বলিউড জুড়ে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। অনেকেই বলেছিলেন, এই বিয়ে নাকি তার জন্য “প্রফেশনাল সুইসাইড”। অর্থাৎ, ক্যারিয়ার ধ্বংসের পথ বেছে নিচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পতৌদি-কন্যা সোহা আলি খান সেই সময়ের কিছু না বলা গল্প সামনে আনেন। সোহা বলেন, ‘মায়ের বিয়ের সিদ্ধান্তকে ঘিরে তখন চারপাশে নানা কথা হচ্ছিল। অনেকে আমার নানীকে (শর্মিলার মা) এসে বলেছিলেন, এই বিয়ে তার ক্যারিয়ারে ‘আত্মহত্যার’ মতো। অর্থাৎ ‘সম্পূর্ণ ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে শর্মিলার।’
তবে সকল কটাক্ষ, জল্পনা ও আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে শর্মিলা ঠাকুর বিয়ে ও ক্যারিয়ার—দুই-ই সামলেছেন অসাধারণভাবে। ‘আরাধনা’, ‘অমর প্রেম’, ‘মৌসম’সহ অসংখ্য হিট ছবিতে অভিনয় করে তিনি নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করেন বলিউডে।
বর্তমানে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব, যিনি প্রমাণ করেছেন— ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত কখনও ক্যারিয়ারের অন্তরায় নয় বরং তা হতে পারে আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।
নয়নদীপ রক্ষিতকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোহা বলেন, মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে রোজগার শুরু করেন মা শর্মিলা ঠাকুর। মায়ের যখন বয়স মাত্র ১৩, মা সিনেমায় অভিনয় শুরু করে দেন। রোজগার করতেন, নিজের পায়ে দাঁড়ান। যদিও সেই সময় সিনেমায় কাজ করা মানুষকে দেখা হতো না ভালো চোখে। আর যেহেতু শর্মিলা অন্য ধর্মে বিয়ে করেন, তাই যেন আরও সমস্যার মুখে পড়েন।
তিনি বলেন, প্রায় সারাজীবন তাকে শুনতে হয়েছে— ‘তোমার স্বামী তোমাকে কাজ করতে দেয়?’ আর এসবে আমার মায়ের জবাব থাকত— এসব কী কথা। অনুমতি দেওয়ার কি আছে। আসলে আমার বাবা খুব খোলা মনের মানুষ ছিলেন। তিনিই সব ছক ভেঙে দিয়েছিলেন।
শর্মিলাকে নিয়ে সোহা আরও বলেন, ‘মা যখন কাজ করত, তখন নারীরা হয় নায়িকা হতো, না হয় মা। মাঝামাঝি কিছু ছিল না আসলে। কিন্তু আমার মা সবসময় নিজের জন্য একদম আলাদা কিছু করেছে।
উদাহরণ টেনে সোহা বলেন, ‘আরাধনা’ সিনেমায় রাজেশ খান্নার হিরোইন হিসেবে দেখা যায় শর্মিলাকে। আবার সেই সিনেমার একটা পার্টেই রাজেশ খান্নার মা হিসেবে দেখা যায় আমার মাকে। ‘সাদা চুল ও বয়স্ক সাজতে অনেক মেকআপ প্রয়োজন হয়। আর সেই সময় মায়ের বয়স ছিল মাত্র ২৬।
অভিনেত্রী বলেন, ভিন ধর্মে বিয়ে, তাও আবার মাত্র ২৪ বছর বয়সে। কথা শুনতে হয়েছিল মাকে— নিজের ক্যারিয়ার শেষ করছেন তিনি। ‘প্রফেশনাল সুইসাইড’ বলেও দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল এ সিদ্ধান্তকে।
সোহা বলেন, ‘মা সবসময় নিজের শর্তে বেঁচেছেন। নিজে যা করতে চেয়েছেন, তাই করেছেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে বিয়ে করেন আমার বাবাকে। সেই সময় সবাই বলত— এ তো প্রফেশনাল সুইসাইড। তুমি কীভাবে এটা করতে পারো! তিনি বলেন, আমার মায়ের জবাব ছিল— ‘আমার কিছু যায় আসে না। আমি এটাই করব’। মা কিন্তু এর পরও টানা কাজ করে গেছে।