spot_img

নবীযুগের প্রখ্যাত কারি উবাই ইবনে কাব (রা.)

অবশ্যই পরুন

নবীজি (সা.)-এর বিশেষ প্রতিভাবান সাহাবিদের একজন সাইয়্যিদুল কুররা উবাই ইবনে কা’ব (রা.)। তাঁর নাম উবাই। উপনাম আবু মুনযির ও আবুত তুফাইল। প্রথমটি দিয়েছেন রাসুল (সা.) এবং দ্বিতীয়টি হজরত উমর (রা.)। উপাধি সাইয়্যিদুল কুররা (প্রধান কারি)। বংশীয় দিক থেকে তিনি মদিনার বিখ্যাত খাজরাজ গোত্রের বনু নাজ্জার শাখার সন্তান। তাই তাঁকে ‘নাজ্জারি’ বলা হয়। ইসলামী পরিচয়ে তাঁকে ‘আনসারি’ বলা হয়। বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হিসেবে ‘বদরি’ বলা হয়। ইলমে কিরাআতে অগাধ দক্ষতার কারণে ‘সাইয়্যিদুল কুররা’ ও ‘মুকরি’ বলা হয়। প্রসিদ্ধ সাহাবি আবু তালহা আনসারি (রা.) তাঁর মামাতো ভাই। (সিয়ার আ‘লামিন নুবালা : ১/৩৮৯-৩৯০; উসদুল গাবাহ ১/৬১)

ইসলাম-পূর্ব জীবন ও ইসলাম গ্রহণ
হজরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-কে ইসলাম-পূর্ব জীবনে মদিনায় ইহুদিদের অন্যতম ধর্মগুরু গণ্য করা হতো। প্রাচীন আসমানি কিতাবসমূহের জ্ঞানও ছিল তাঁর। সে যুগে পড়ালেখার তেমন পরিবেশ ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি লিখতে জানতেন। এ কারণে তিনি ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল (সা.)-এর লেখালেখির দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য অর্জন করেন। (আল-আ‘লাম ১/৮২)

রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরতের পূর্বে কোনো একসময় উবাই ইবনে কাব (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। মীনার আকাবার দ্বিতীয় (শেষ) শপথে অংশগ্রহণ করেন। তাতে মদিনায় হিজরতের পর রাসুল (সা.)-কে পূর্ণ সহায়তার দৃঢ় অঙ্গীকার করেন। তিনি বদর, উহুদ, খন্দকসহ সব যুদ্ধে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। (আল-আ‘লাম ১/৮২; সিয়ার আ‘লামিন নুবালা ১/৩৯০; আল-ইসাবাহ ১/১৮১)

ওহি লেখার সৌভাগ্য
যাঁরা রাসুল (সা.)-এর ওহি লিখতেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন হজরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.)। হজরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.)-এর পূর্বে তিনিই ওহি লিখতেন। তিনি উপস্থিত না থাকলে রাসুল (সা.) হজরত যায়েদ (রা.)-কে ডেকে নিতেন। পরবর্তীতে হজরত যায়েদ (রা.) বেশি লিখতেন। (আল-ইস্তিআব ১/৬৮)

ইলমি দক্ষতা
উবাই ইবনে কা’ব (রা.) ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিতে ব্যস্ত না হয়ে মসজিদে নববিতে কোরআনের পাঠ-পঠন-পদ্ধতিসহ দ্বীনি ইলম অর্জনের পেছনে সময় দিতেন। এভাবে রাসুল (সা.)-এর সাহচর্যে থেকে ইলমে ওহির বিশাল ভান্ডার অর্জন করেন। একসময় তিনি ইলম ও আমলের সাজে সজ্জিত হয়ে মহান মর্যাদার অধিকারী হন। রাসুল (সা.)-এর যুগেই তিনি ফাতাওয়া দিতেন। দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.) তারাবির জামাত চালু করেন। ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন হজরত উবাই ইবনে ক’ব (রা.)-কে।
(আল-আ‘লাম ১/৮২.; সিয়ার আ‘লামিন নুবালা ১/৩৯৪; আবু দাউদ ১/২০২)
ইমাম শা’বি (রহ.) তাবেঈ মাসরূক (রহ.) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিচারক ও ফাতওয়া দাতা ছয় জনের একজন ছিলেন উবাই ইবনে কা’ব (রা.)। (উসদুল গাবাহ : ১/৬২)

ইলমে কিরাআত ও উবাই ইবনে কাব (রা.)
রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় তিনি কোরআনের একটি পূর্ণ সংকলন প্রস্তুত করেন এবং তা রাসুল (সা.)-এর সামনে পেশ করেন। এই সংকলনটি ‘মাসহাবে উবাই’ নামে খ্যাত ছিল। কোরআনের বিভিন্ন পাঠ-পদ্ধতিতে ছিল তাঁর অসাধারণ দক্ষতা। তাঁর তিলাওয়াতে ছিল বিশেষ আকর্ষণ। রাসুল (সা.) মাঝে মধ্যে তাঁর থেকে কোরআন শুনতেন। আনাস (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) উবাইকে বললেন, আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন, তোমাকে কোরআন শুনাতে। হজরত উবাই বললেন, ‘আল্লাহ কি আমার নাম উল্লেখ করেছেন?’ ইরশাদ করলেন, ‘হ্যাঁ।’ এরপর বললেন, ‘আমি রাব্বুল আলামিনের দরবারে আলোচিত হয়েছি?’ ইরশাদ করলেন, ‘হ্যাঁ।’ তখন তাঁর দুই চোখ অশ্রুতে ভরে গেল। (বুখারি ৭৪১; মুসলিম ১/২৬৯; সিয়ার আ‘লামিন নুবালা ১/৩৯৪)

হাদিস : উবাই ইবনে ক’ব (রা.) সূত্রে ১৬৪টি হাদিস বর্ণিত আছে। এর মধ্যে বুখারি-মুসলিম যৌথভাবে ৩টি এবং পৃথকভাবে বুখারি ৩টি ও মুসলিম ৭টি হাদিস বর্ণনা করেছেন।

ইন্তেকাল : উবাই ইবনে কা’ব (রা.) মদিনায় ইন্তেকাল করেন। (মু‘জামুস সাহাবা : ১/৩)
তবে কোন সনে, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আবু নু‘আইম (রহ.) বলেন, এক মতে ২২ হিজরি (উমর (রা.)-এর খেলাফতে), আবার এক মতে ৩০ হিজরি (উসমান (রা.)-এর খেলাফতে)। দ্বিতীয় মতই গ্রহণযোগ্য। (উসদুল গাবাহ ১/৬৩ পৃ.; আল-ইসাবাহ ১/১৮১ু১৮২ পৃ.; আত-ত্বাবাকাতুল কুবরা ৩/৩৮১ পৃ., ক্র.১৭৪; তাহজিবুল আসমা ওয়াল লুগাত ১/১০৯-১১০ পৃ.)
লেখক : মুহাদ্দিস ও গবেষক

সর্বশেষ সংবাদ

মানবসম্পদ উন্নয়নসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি হস্তান্তরে একমত বাংলাদেশ-তুরস্ক

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, মহাকাশ প্রযুক্তিতে ঢাকার একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার প্রয়োজন। বাংলাদেশ ও তুরস্ক যদি একের অপরকে...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ