মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েই বিভিন্ন দেশে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যার প্রভাব পড়েছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে। এর প্রভাব থেকে বাঁচতে পারছে না ক্রীড়াঙ্গনও। ট্রাম্প ট্যারিফে এখন হুমকির মুখে পড়েছে দেশটিতে আগামী বছর হতে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক ইভেন্ট।
খেলাধুলার দুনিয়ায় আয়োজনের ব্যাপকতা, অর্থের সমাগম ও বিশ্বজুড়ে সম্পৃক্ততা বিচারে সবচেয়ে বড় দুটি ইভেন্ট ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক। এ দুটি ইভেন্টেরই পরবর্তী আসরের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া গোটা বিশ্বে খেলাধুলা পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজারও যুক্তরাষ্ট্র। তাই ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির প্রভাব বেশ ভালোভাবেই পড়তে যাচ্ছে আসর দুটিতে।
এমন প্রেক্ষাপটে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের কারণে খেলাধুলায় স্পনসরদের অর্থের জোগান, ক্রীড়া স্থাপনা ও ব্র্যান্ড এবং ক্রীড়াপণ্য প্রস্তুত ও দামে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে স্টক মার্কেটে থাকা ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে ব্যাপক দরপতনও ঘটেছে।
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর প্রথমেই বড় ধাক্কা লাগে স্টক মার্কেটে। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্রীড়াসামগ্রী বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান আন্ডারআর্মারের শেয়ারের ১৮.২৫ শতাংশ দরপতন ঘটেছে, যা নাইকির বেলায় ১৪.৪%, পুমার ১১.৮% এবং অ্যাডিডাসের ১১.৭%।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার হিসাব অনুসারে, ২০২৪ সালে ১০৩০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ক্রীড়াপণ্য আমদানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যার ৬২৭ কোটিরই রপ্তানিকারক চীন। বিশ্ববাজারের বেশির ভাগ ক্রীড়াপণ্যই নির্মিত হয় চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়াসহ এশিয়ার দেশগুলোতে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন, এতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী দেশ এশিয়ারই। কম্বোডিয়ার জন্য ৪৯%, ভিয়েতনামের ৪৬%, চীনের ৩৪% এবং ইন্দোনেশিয়ার জন্য ৩২% পাল্টা শুল্ক আরোপ হয়েছে। এসব দেশে তৈরি হয় খেলারসহ সব ধরনের ফুটওয়্যার, সাঁতারের পোশাক, ট্র্যাকশুট, আর্টিকলস, বল, গলফ, রেকেটসহ অন্যান্য সামগ্রী।
তাই এসব পণ্য দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। তবে নতুন করে শুল্ক ধার্য হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়ে যাবে এসব পণ্যের। ফলে কমে যাবে বিক্রিও। আর সেটি হলে এর প্রভাব পড়বে ক্রীড়াঙ্গনেও। কেননা, তখন স্পন্সর পেতে বেগ পেতে হবে ক্রীড়া ইভেন্ট আয়োজকদের। আর পেলেও স্পন্সর থেকে টাকার পরিমাণ কমে যাবে।
২০২৬ সালে কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে যৌথভাবে ৪৮ দলের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র। আর দুই শ–এর বেশি দেশ ও অঞ্চলের অংশগ্রহণে ২০২৮ অলিম্পিক হবে লস অ্যাঞ্জেলেসে। আশার কথা, ২০২৬ বিশ্বকাপ আয়োজনে হোয়াইট হাউজ টাস্কফোর্সের প্রধান ট্রাম্প নিজেই। যে কারণে শুল্ক আরোপ-সৃষ্ট অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব কমানোর প্রধান দায়িত্বও তার কাঁধেই। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।