যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সহযোগী ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নামছেন হাজার হাজার মানুষ। আজ শনিবার (৫ এপ্রিল) ‘হ্যান্ডস অফ!’ শীর্ষক দেশব্যাপী এ প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সেখানে একদিনে সর্বোচ্চ মানুষকে বিক্ষোভ করতে দেখা যাবে এবং ২০০টি বিক্ষোভ হবে।
গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর ইলন মাস্কের পরামর্শে কয়েক হাজার সরকারি চাকরিজীবীকে চাকরিচ্যুত করেন ট্রাম্প। এই গণ ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধেই হবে বিক্ষোভ। এছাড়া নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ যেসব নীতি গ্রহণ করেছেন সেগুলোর বিরুদ্ধেও আন্দোলন হবে। বিক্ষোভকারীরা ‘হাত সরাও’ স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নামবেন। এতে ফিলিস্তিনিপন্থি এবং ইসরায়েলের গাজায় নতুন বর্বর হামলার বিরোধী গ্রুপগুলোও যোগ দেবে। তারা গাজা নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাবেন।
‘ইন্ডিভিজিবল’ নামে একটি গ্রুপ, যেটি অন্য আরও গ্রুপের মতো বিক্ষোভের আয়োজন করছে সেটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইজরা লেভিন বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “এটি একটি বিশাল বিক্ষোভ যা ইলন মাস্ক, ট্রাম্প এবং কংগ্রেসে থাক রিপাবলিকান এবং ট্রাম্পের সমর্থকদের প্রতি একটি পরিষ্কার বার্তা দেবে যে, আমরা আমাদের গণতন্ত্রের ওপর, আমাদের কমিউনিটির ওপর, আমাদের স্কুলের ওপর এবং আমাদের বন্ধু ও প্রতিবেশীদের ওপর তাদের হাত চাই না।”
প্রতিবাদের মূল কারণসমূহ:
সামাজিক নিরাপত্তা অফিসসমূহের বন্ধ: সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বিভিন্ন অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা নাগরিকদের জন্য সেবা গ্রহণে অসুবিধা সৃষ্টি করেছে।
অভিবাসীদের নির্বাসন বৃদ্ধি: অভিবাসীদের নির্বাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হয়েছে, যা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের সুরক্ষা হ্রাস: ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের জন্য পূর্বে বিদ্যমান সুরক্ষা ও অধিকার সীমিত করা হয়েছে।
এই প্রতিবাদগুলো ‘হ্যান্ডস অফ!’ আন্দোলনের আওতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা ১৫০টিরও বেশি নাগরিক অধিকার সংগঠন, শ্রমিক ইউনিয়ন, LGBTQ+ সমর্থক, ভেটেরান্স এবং নির্বাচন কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত।
প্রধান প্রতিবাদ স্থানসমূহ:
ন্যাশনাল মল, ওয়াশিংটন, ডি.সি.: সবচেয়ে বড় সমাবেশ এখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছেন। দেশব্যাপী অন্যান্য শহর: সর্বমোট ১,২০০টিরও বেশি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যেই বিস্তৃত।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউজ এবং ইলন মাস্ক কেউই এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত মন্তব্য করেননি। বিক্ষোভের ইভেন্টের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৫০টি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ এই বিক্ষোভের যোগ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ছাড়াও ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, মেক্সিকো এবং পর্তুগালে বিক্ষোভের পরিককল্পনা করা হয়েছে। এরমধ্যে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মলের সামনে সবচেয়ে বড় র্যালি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে প্রতিবাদের কারণে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের গার্ডেন ট্যুর স্থগিত করেছেন, যা পূর্বে আজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তিনি নিরাপত্তার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মূলতঃ এই প্রতিবাদগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষের প্রতিফলন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে সমর্থনের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স ও এপি