ঈদ যাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম। তিনি বলেছেন, ঈদ যাত্রায় যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও চাঁদাবাজি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঈদকে ঘিরে কোনো বাস কাউন্টার বা সংশ্লিষ্ট কেউ ঈদ বকশিস বা অন্য যেকোনো নামে টাকা আদায় করলে যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
সোমবার (২৪ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাইফুল আলম।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রীদের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন, নিরাপদ, যাত্রী হয়রানিমুক্ত টিকেট কালোবাজারি বন্ধ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ ও সড়ক পথে চাঁদাবাজি বন্ধের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এ সময় সাইফুল বলেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পরিবহন সেক্টরকে অস্থিতিশীল করতে কাজ করে যাচ্ছে। এখনো তারা গোপনে এসব কাজ করছে। যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করবে, তাদের আমরা প্রতিহত করব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদ যাত্রায় আমরা লক্ষ্য করি, মোটরসাইকেলে একটা বিরাট সংখ্যক মানুষ দূরপাল্লার গন্তব্যে যাতায়াত করেন। এতে প্রতি বছরই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন অনেকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিশোর বয়সের ছেলেরা দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে। আহত হচ্ছেন অনেকে।
ঈদ যাত্রায় মোটরসাইকেলে যাতায়াতকে নিরুৎসাহিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিআরটিএকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।
সাইফুল আলম বলেন, বিগত ১৬ বছর স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার সড়ক পরিবহন সেক্টরকে দলীয়করণসহ চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল এবং সকল ক্ষেত্রে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করেছে। গত ৫ আগস্টের পর ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নামে সকল প্রকার চাঁদা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যা এখনও বহাল আছে। শুধুমাত্র নিজ নিজ পরিবহন কম্পানি বা কাউন্টার মালিকরা তাদের স্ব স্ব পরিবহন পরিচালনার প্রয়োজনে মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিচালনা ব্যয় নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মালিক সমিতি বা কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশন কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট বা জড়িত নয়।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে সাইফুল আলম আরো বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা থেকে যে পরিমাণ যাত্রী সড়ক পথে যাত্রা করবেন, তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক গাড়ি দিয়ে কম সময়ে নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছানো কষ্টদায়ক কাজ। ঈদ যাত্রাকে নির্বিঘ্ন, নিরাপদ, যানজটমুক্ত এবং সড়ক পথ চাঁদাবাজিমুক্ত রাখার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যৌথবাহিনী ও মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিসহ দেশের সকল জায়গায় যৌথসভা করা হয়েছে। আমরা ঢাকাস্থ টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের যাত্রাপথে সার্বিক সহযোগিতায় এবং নিম্নোক্ত বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।
ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। বলা হয়েছে, ঈদের পাঁচ দিন আগে এবং ঈদের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত ঢাকাস্থ সকল বাস টার্মিনাল এবং আশপাশের এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করতে হবে।
ঢাকার আশপাশের চিহ্নিত স্থানগুলো যেমন— চন্দ্রা, বাইপাল, গাজীপুর বাইপাস, সাইনবোর্ড, শনির আখড়া, কেরানীগঞ্জ, ভুলতা, গাউসিয়া, মদনপুর, সাভার, নবীনগর, হেমায়েতপুর এলাকায় স্থানীয় ও হাইওয়ে পুলিশের মাধ্যমে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে যানজটমুক্ত রাখতে হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ মার্চ থেকে ঈদ পর্যন্ত এবং ঈদের পরের তিন দিন পণ্যবাহী পরিবহন বন্ধ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধসহ সড়ক পথে যে কোনো নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করার লক্ষ্যে সারা দেশের থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ টহলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়।