গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে।
শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর হস্তান্তর করেন। এই প্রতিবেদনটি দেশের গণমাধ্যম খাতের উন্নয়ন এবং সংস্কারের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে এসেছে।
কমিশনের সুপারিশের মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো গণমাধ্যমের মালিকানা, যেখানে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমের মালিকানার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এবং মিডিয়া কোম্পানিতে কর্মীদের শেয়ার দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব।
তবে, প্রতিবেদনটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে:
বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন গঠন:
প্রেস কাউন্সিল ও প্রস্তাবিত সম্প্রচার কমিশনের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন’ গঠন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এটি সব ধরনের গণমাধ্যমকে একই নিয়ন্ত্রণ সংস্থার আওতায় এনে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এতে সাংবাদিকদের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ, সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, এবং ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের জন্য আইনি সুরক্ষা:
সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও জীবনে বেআইনি অনুপ্রবেশ, নজরদারি এবং আড়িপাতা সংক্রান্ত ঘটনা তদন্ত করার এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য আইন সংস্কার:
প্রতিবেদনে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা সুরক্ষায় সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধুমাত্র যুদ্ধাবস্থায় যুক্তিসংগত বিধিনিষেধের আওতায় আসবে।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৯, ৫০০, ৫০১ এবং ৫০২ ধারা এবং ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারা বাতিল করার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া, সাংবাদিকদের মানহানি সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণকারী প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট সংশোধন:
সাংবাদিক, অধিকারকর্মী এবং আইন বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের বিষয়গুলো সমাধান করতে সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এছাড়া, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩-এর ৫ ধারা সংশোধন করে কেবল জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাবও উঠে এসেছে।
আদালত অবমাননা আইন পুনর্বিবেচনা:
১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইন এবং ২০১৩ সালের আদালত অবমাননা আইন পুনর্বিবেচনা করার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সংক্রান্ত আইন বাতিল:
দণ্ডবিধির ২৯৫ক এবং ২৯৮ ধারা, পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারা বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) স্বাধীনতা:
বাসসকে সরকারী নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে, নিজস্ব আয়ে পরিচালিত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।