২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে নির্বাচনে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে হিন্দু-মুসলিম ইস্যু। এবার বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসলে মুসলিম বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে ছুঁড়ে ফেলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার এমন এক মন্তব্যকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে রীতিমত সোরগোল পরে গেছে।
মঙ্গলবারই তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জিকে হারিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে এবং ওদের যে’কটা মুসলিম বিধায়ক জিতে আসবে, চ্যাংদোলা করে তাদেরকে রাস্তায় ফেলবো।’ আগামী দশ মাস পরে তাদের রাস্তায় ফেলা হবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
তিনবারের জন্য রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল কংগ্রেসকে এভাবে নিশানা করার পাশাপশি মমতার সরকারকে ‘মুসলিম লীগ-২’ সরকার বলেও আখ্যায়িত করে শুভেন্দু এও বলেছিলেন ‘বাংলার হিন্দু জনতা এই সরকারকে উপড়ে ফেলবে।’
পবিত্র রমজান মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করায় পাল্টা শুভেন্দু ও তার দল বিজেপিকে নিশানা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
বুধবার রাজ্য বিধানসভার বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্র চিরস্থায়ী, কিন্তু চেয়ার চিরস্থায়ী নয়। চেয়ারকে সম্মান করুন। মুসলিম বিধায়কদের বহিষ্কার করার কথা আপনি কীভাবে ভাবতে পারেন? এখন রোজার মাস চলছে, তাই তারা (বিজেপি) মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করছে এবং মুসলিমরা এটা মোটেই পছন্দ করে না। আসলে তারা (বিজেপি) দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক পতন থেকে সকলের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর
জন্যই সাম্প্রদায়িক বক্তব্য রাখছেন। আমি একজন হিন্দু এবং আমার বিজেপির কাছ থেকে কোনো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই।’
শুভেন্দুর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মমতা আরও বলেন, ‘বিধানসভায় আমাদের অবশ্যই এব্যাপারে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে এবং একটি ধর্মকে অবমাননা করার বক্তব্যের নিন্দা করতে হবে।’
মমতার অভিমত, বিজেপি ‘ভুয়া হিন্দুত্ব’ আমদানি করে। বিজেপি যে ধরনের হিন্দুত্ব আমদানি করছে সেটা বেদ (হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ) সমর্থন করে না। আপনি কিভাবে মুসলিমদের নাগরিকত্বের অধিকার অস্বীকার করেন? এটা জালিয়াতি ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনারা ভুয়া হিন্দুত্ব আমদানি করছেন।’
সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে বিজেপির মনোভাব নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন ‘হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করার সম্পূর্ণ অধিকার আমার রয়েছে। কিন্তু আপনারা যে ধর্ম আমদানি করতে চাইছেন সেই সংস্করণের নয়। দয়া করে আপনারা হিন্দু কার্ড খেলবেন না।’
বিভিন্ন ধর্মকে সাথে নিয়ে চলার উপর গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা (ভারত) একটি ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী রাষ্ট্র। প্রত্যেকেরই তাদের ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠদের কর্তব্য হল সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব এবং ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা করতে হবে এবং তৃণমুল কংগ্রেস সকল ধর্মকে সম্মান করে এবং শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
মমতা বলেন ‘আমি সকল ধর্মকে ভালোবাসি, এবং আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের তরফে যদি কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর প্রচেষ্টা হয়, আমরা তার নিন্দা জানাই।’
এদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ভুয়া হিন্দুত্ব’ আমদানি নিয়ে মমতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিধানসভা ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা। বিধানসভায় বিজেপির চিফ হুইপ শংকর ঘোষের নেতৃত্বে প্রায় ২৫ জন বিধায়ক বিধানসভার প্রধান গেটের বাইরে এসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
এদিকে শুভেন্দুর চ্যাংদোলা করে ছুঁড়ে ফেলা নিয়ে কে সরাসরি নিশানা করলেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের। বুধবার তৃণমূল বিধায়কের পাল্টা হুঁশিয়ারি ‘শুভেন্দু অধিকারী যে কথা বলেছেন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আমরা ৪২ জন বিধায়ক ওনাকে ঠুসে দেব। আর মুর্শিদাবাদে কোনদিন ওকে ঢুকতে দেবো না।’ ‘উনি আমাদের মারবেন, চ্যাংদোলা করে বাইরে ফেলবেন, আমরা কি রসগোল্লা খাওয়াবো?’ এই প্রশ্নও তোলেন তৃণমূল বিধায়ক।