জীবনের কোনো না কোনো সময় হাঁটু ব্যথা সবাইকেই ভোগায়। বিশেষ করে যাদের বয়স চল্লিশের ওপর তারা হাঁটু ব্যথায় বেশি ভোগেন। এতে হাঁটা-চলাসহ দৈনন্দিন কাজগুলো করাও কঠিন হয়ে যায়।
তবে ঠিক কোন কারণগুলোর জন্য এই হাঁটুব্যথা হয়, সে বিষয়ে অনেকেই জানেন না। তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রইল কিছু পরামর্শ- অনেক রোগীর ক্ষেত্রে হাঁটু ফুলে যাওয়া বা বেঁকে যাওয়াও দেখা যায়। হাঁটুকে চিকিৎসার ভাষায় ‘জেনু’ বলা হয়। কিছুক্ষেত্রে হাঁটুতে এমন জেনু ভেরাস বা জেনু ডিফর্মিটি দেখা দিতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে হাঁটুব্যথা থেকে কোমর ব্যথাও দেখা দিতে পারে।
হাঁটুর গঠন হয়েছে মূলত তিনটি অংশ মিলে। উপরেরটি হচ্ছে ফিমার, নিচেরটি টিবিয়া এবং সামনের অংশের নাম প্যাটেলা। হাঁটুর ভেতরের পানিকে বলা হয় সাইনোভিয়াল ফ্লুইড। আমাদের যে কারণে হাঁটুর অপারেশন প্রয়োজন হয় বা রোগী বাধ্য হয় সেটার মূল কারণ হচ্ছে আমাদের মাঝে হাঁটুর সমস্যা নিয়ে জনসচেতনতা তেমন নেই।
হাঁটুব্যথা যে কারণেই হোক না কেন, রোগী যদি ব্যথার শুরুতেই চিকিৎসা শুরু করেন তাহলে অধিকাংশ সময় অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। তবে হাঁটুব্যথার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষ কিছু ভুল করে থাকে। যেমন ব্যথা হলেই চেয়ারে বসে কাজ করা, হাঁটা চলা কমিয়ে দেওয়া, সিঁড়ি ওঠানামা না করা ইত্যাদি। এগুলো আসলে ভ্রান্ত ধারণা।
মানুষ হচ্ছে মুভমেন্ট করা প্রাণী। হাঁটা চলাফেরা এগুলো আমাদের করতে হয়। এজন্য দরকার আমাদের জনসচেতনতা। হাঁটুর ব্যথা ট্রিটমেন্ট না করলে রোগীর ভিতরে ইনফেকশন হয় পরে প্রদাহ হতে হতে হাঁটু জোড়া ক্ষয় হয়। দেখা যায় অনেক সময় এই সমস্যা কারণে পা বেঁকে যেতে পারে। অনেক হাঁটুর সামনে যে মাসেল এবং লিগামেন্ট থাকে দুর্বল হয়ে পড়ে একপর্যায়ে শক্তি হারিয়ে ফেলে হাঁটু। ব্যথা হলে আমাদের যেটা করতে হবে যে এটার সঠিক চিকিৎসা করতে হবে।
বিভিন্ন এক্সারসাইজ করতে হবে। তাহলে অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হবে না। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হয়, বিভিন্ন ইলেকট্রো ফিজিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে। অন্যদিকে পিআরপি থেরাপি, বিভিন্ন ইলেকট্রো চিকিৎসা এগুলো আধুনিক চিকিৎসার অংশ। যে কারণে হাঁটুর সমস্যাটা হলো সেটা যদি আমরা প্রিভেনশন করতে পারি তাহলে কিন্তু হাঁটুর অপারেশনের প্রয়োজন পরবে না।
কেন হাঁটুর সমস্যাটা হলো তা স্পেসিফিক ডায়াগনোসিস করে বের করতে হবে। ব্যথা হলে, হাঁটু ফুলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে অপারেশন করা যাবে না । অনেক সময় অপারেশন করতে হতে পারে যদি সিবিআর আর্থাইটিস হয়। এ ছাড়া একেবারে ডিজেবল এবং রোগীর বয়স, পেশা এগুলো সব সমন্বয় করে অপারেশনের প্রয়োজন- তখন হয়তো অপারেশনের প্রয়োজন হবে। তাই এ বিষয়ে সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।
লেখক : ফিজিওথেরাপি ও রিহেবিলিটেশন স্পেশালিস্ট ডিপিআরসি, শ্যামলী, ঢাকা।