বাংলাদেশের কৃষিখাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এবং মাটির স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। ‘বাংলাদেশে মাটির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য উন্নয়ন ও রূপান্তর : কৃষকদের সাথে এবং কৃষকদের জন্য স্থিতিশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ’ শীর্ষক এই গবেষণায় কৃষকদের সরাসরি সংযুক্ত করে তাদের মাটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যের উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হবে।
গবেষণা প্রকল্পটি যৌথভাবে পরিচালনা করছে গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (এসিআইএআর), সাস্টেইনেবল এগ্রিকালচার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় গবেষণা প্রকল্পের প্রারম্ভিক কর্মশালায় গবেষণা প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে এসব কথা বলেন অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (এসিআইএআর) প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. বিপ্লব কুমার সাহা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ওই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
গবেষণার মূল লক্ষ্যের বিষয়ে অধ্যাপক ড. বিপ্লব সাহা বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে কৃষকদের সরাসরি সম্পৃক্ত করে মাটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। দেশের কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার কারণে উৎপাদন সংকটে পড়ছেন। বিশেষ করে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষিজমিতে খরার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। খরাপ্রবণ এই তিনটি জেলা নিয়ে বর্তমানে কাজ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, খরাপ্রবণ এলাকার পাশাপাশি বন্যাপ্রবণ এলাকা নিয়েও কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় উন্নত গবেষণা এবং মাটির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য কৃষকদের কাছে সহজবোধ্যভাবে পৌঁছে দেয়া জরুরি। কৃষকরা যাতে মাটির স্বাস্থ্য ও গুণগত অবস্থা জেনে ফসল উৎপাদনে টেকসই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন সেকারণেই তাদের সাথে নিয়ে এই গবেষণা পরিচালনা করা হবে।
গবেষণার পটভূমি এবং গবেষকদের প্রত্যাশা সম্পর্কে এসিআইএআর-এর প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. চেংরং চেন বলেন, কৃষক আমাদের এই গবেষণার কেন্দ্র। এ প্রকল্পের আওতায় মাটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণা, কৃষকের ভাষায় তথ্যের রূপান্তর, মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কাজ করা হবে। আমরা এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে চাই যা কৃষক, গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সমন্বয় ঘটাবে।
কর্মশালার প্রধান অতিথি ছিলেন বাকৃবির ভিসি অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, বিশেষ অতিথি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি অধ্যাপক নীল মেইনজিস, সয়েল রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা এবং কৃষি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম আহমাদ। আরো উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (এসিআইএআর)-এর প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. চেংরং চেন এবং এসিআইএআর-এর বাংলাদেশ অংশের প্রকল্প পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. বিপ্লব কুমার সাহা।
কর্মশালায় গবেষকদের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, কৃষকদের মাটি সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খরচ কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গবেষণা পরিচালনা করতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, পরিবেশের প্রতিটি উপাদান একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। যদি কোনো একটি উপাদানের গুণগত মান খারাপ হয়, তাহলে তা কোনো না কোনো সংকেত দেয় এবং শেষ পর্যন্ত প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই গবেষণায় কৃষকরা সরাসরি যুক্ত থেকে মাটির গুণাগুণ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। কৃষকদের জন্য এবং তাদের সম্পৃক্ত করে এ ধরনের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। পাশাপাশি, মাটির স্বাস্থ্য নির্ধারণে কম খরচের কার্যকর প্রযুক্তি উদ্ভাবনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
কর্মশালায় শেষ পর্যায়ে গবেষণা প্রকল্পের সদস্য এবং অতিথিদের অংশগ্রহণে একটি মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয়।