যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়ে ইউরোপীয় মিত্রদের “অভ্যন্তরীন হুমকি” সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন, ইউরোপীয় সরকারগুলো চরম সেন্সরশিপ চালাচ্ছেন এবং তারা “নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া অভিবাসন” পরিস্থিতি যথার্থভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) তিনি বলেন, “ইউরোপে যে হুমকি সম্পর্কে আমি উদ্বিগ্ন ইউরোপ, রাশিয়া বা রাশিয়া ইউরোপ নয়, ইউরোপ চীনও নয়, এটা কোনো বাইরের দেশের কেউ নয়। আমি যা নিয়ে উদ্বিগ্ন তা হলো ভেতর থেকেই হুমকি, তাদের কিছু মৌলিক মূল্যবোধ থেকে ইউরোপের সরে আসা যে মূল্যবোধগুলি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও অভিন্ন।” খবর ভয়েস অব আমেরিকার।
ন্যাটোর মিত্র রাষ্ট্র রোমানিয়া যে রাশিয়ার অপতথ্যের প্রমাণকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেছে, ভ্যান্স তার নিন্দা করেন বলেন, “আপনাদের গণতন্ত্র যদি বাইরের দেশের কয়েক লক্ষ ডলারের বিজ্ঞাপন নষ্ট করে দিতে পারে, তাহলে গোড়া থেকেই তা যথেষ্ট মজবুত ছিল না। তিনি আরো বলেন, “আমি আমার ইউরোপীয় বন্ধুদের বলবো বিষয়টির প্রেক্ষাপট দেখার জন্য”।
তিনি বাহ্যত ডানপন্থি দলগুলোর প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেন, দলগুলোকে ইউরোপের সরকারগুলোতে যোগ দিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “গণতন্ত্র এই পবিত্র নীতির উপর নির্ভর করে যে জনগণের কন্ঠই আসল ব্যাপার। সেখানে কোন রকমের কঠোর প্রতিবন্ধকতা স্থাপনের কোন সুযোগ নেই।”
ভ্যান্স বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সামনে অত্যন্ত জরুরি সব চ্যালেঞ্জের মধ্যে “অভিবাসন চ্যালেঞ্জের চেয়ে আর বড় কিছু নেই।”
তিনি “গোটা মহাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে রাজনীতিক এবং অন্যান্যদেরও সচেতন ও ধারাবাহিকভাবে এ ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে” দায়ী করেন এবং তিনি মিউনিখে বৃহস্পতিবারের হামলার কথাটি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন যেখানে একজন আফগান নাগরিক ভিড়ের মধ্যে তার গাড়িয়ে চালিয়ে অন্তত ৩০ জনকে আহত করেছে।
সেখানে উপস্থিত নেতা ও শীর্ষ কর্মকর্তারা আশা করছিলেন যে ভ্যান্স ইউক্রেন ও রাশিয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে আলোকপাত করবেন। তিনি এই বিষয়টি নিয়ে সামান্যই মন্তব্য করেছেন।
ভ্যান্স বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন, “ইউরোপীয় নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন এবং বিশ্বাস করেন যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আমরা একটা যুক্তিসঙ্গত নিস্পত্তিতে পৌঁছাতে পারবো। আর আমরা এটাও মনে করি যে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আগামী বছরগুলিতে ইউরোপ তার নিজের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে আর বড় ভূমিকা পালন করবে।”
ভ্যান্সের ভাষণের পর জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস ইউরোপীয় নীতিকে ভ্যান্স যেভাবে তুলে ধরেছেন তা প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি বলেন, “আমি যদি ঠিক মতো বুঝে থাকি তা হলে তিনি ইউরোপের কিছু অংশের অবস্থাকে কর্তৃত্ববাদী অঞ্চলগুলির সঙ্গে তুলনা করছেন… সেটা গ্রহণযোগ্য নয়”।
এই বক্তব্য শেষে শুক্রবার ভ্যান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে বৈঠক করেন।
রাশিয়াকে বিচ্ছিন্নতা থেকে ফিরিয়ে আনা
এ সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধের সমাপ্তি টানা নিয়ে কথা বলেছেন। ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখ এই যুদ্ধের তিন বছর পুর্তি হবে।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেন, তিনি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এই যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে “আমাদের টিমের অবিলম্বে আপোষ আলোচনা শুরু করার ব্যাপারে একমত হয়েছি।”
সেইসাথে ট্রাম্প কিয়েভের ন্যাটোর সদস্য হবার প্রচেষ্টাকে “অবাস্তব” এবং রুশ-অধিকৃত অঞ্চলগুলোকে ফিরে পাওয়ার ইচ্ছাকে “কাল্পনিক” বলে অভিহিত করেছেন।
তাছাড়া ট্রাম্প বলেন, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া অঞ্চল অধিগ্রহণের পর, শিল্প-সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জোট, ‘গ্রুপ অফ সেভেন’ থেকে মস্কোকে বহিষ্কার করা ভুল ছিল। সেই সময় এটি ‘গ্রুপ অফ এইট’ বা ‘জি-এইট’ বলে পরিচিত ছিল।
ট্রাম্প বলেন, “আমি তাদের ফিরে আসাটা দেখতে চাই।” তিনি আরো বলেন, তিনি এবং পুতিন “একত্রে কাজ করতে, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে এবং পরস্পরের দেশ সফরে যেতে একমত হয়েছেন এবং বলেন “সম্ভবত” তারা অদূর ভবিষ্যতে সৌদি আরবে মিলিত হবেন।
রাশিয়ার রাজনীতিকরা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মস্কোকে বিচ্ছিন্ন করার নীতি থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্টের এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় নেতারা বলেছেন তারা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন যে ওয়াশিংটন পুতিনের সাথে আপোষ করছে যা এই সংঘাতের সম্ভাব্য সমাধানের পথে কিয়েভের অবস্থানকে সমস্যার মুখে ফেলবে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দ্যর লেয়েন, মিউনিখে ভ্যান্সের উপস্থিতিতে দেয়া ভাষণে বলেন, “ব্যর্থ ইউক্রেন ইউরোপকে দুর্বল করবে তবে তা যুক্তরাষ্ট্রকেও দুর্বল করবে।
এই সম্মেলনের আগে প্রকাশিত মিউনিখ সিকিউরিটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এই বছরের এই বৈঠক একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যা কিনা ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” পররাষ্ট্র নীতির প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।