বাংলাদেশে স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করতে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের সাথে আলোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ভিডিও কলে আলোচনার সময় ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাথে মাস্কের কোম্পানির সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়েও তারা আলাপ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে দুবাইতে অবস্থানরত প্রধান উপদেষ্টা স্পেসএক্স ও টেসলা প্রধান ইলন মাস্কের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- রোহিঙ্গা সঙ্কট ও অগ্রাধিকার-বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান, এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার ও গ্লোবাল এঙ্গেজমেন্ট অ্যাডভাইজার রিচার্ড গ্রিফিথস।
বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ইলন মাস্কের সঙ্গে আলাপকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্টারলিংকের স্যাটেলাইট যোগাযোগের রূপান্তরমূলক প্রভাব, বিশেষ করে বাংলাদেশের উদ্যোগী যুবক, গ্রামীণ ও ঝুঁকিপূর্ণ নারী এবং প্রত্যন্ত জনগোষ্ঠীর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উচ্চগতির ও স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ কীভাবে বাংলাদেশের ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে পারে, সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষমতায়ন এবং দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে জাতীয় সীমানার বাইরে প্রবেশাধিকার দেয়ার উপায় নিয়ে এ সময় আলোচনা করা হয়।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামোতে স্টারলিংকের কানেক্টিভিটি যুক্ত করা হলে লাখ লাখ মানুষের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতির সাথে দেশকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে একীভূত করা হবে।
তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রযুক্তিচালিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচনে মাস্কের সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্টারলিংক গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ পল্লী ফোনের একটি সম্প্রসারিত অংশ হতে পারে, যা গ্রামের নারী ও তরুণদের বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তারা বৈশ্বিক উদ্যোক্তায় পরিণত হবে।
ইলন মাস্ক এ সময় গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেলের প্রশংসা করে দারিদ্র্য বিমোচনে এর বৈশ্বিক প্রভাবের কথা জানান।
টেসলা মোটরসের এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণফোন উভয়ের কাজের ব্যাপারেই তিনি অনেক বছর ধরে জানেন।
স্টারলিংকের মতো প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে কাজে লাগানো বাংলাদেশে উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে বলে তিনি দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেন।
ড. ইউনূস স্টারলিংক সেবার চালুর উদ্দেশে ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং জাতীয় উন্নয়নে এই উদ্যোগের তাৎপর্য তুলে ধরেন। মাস্কও এই আমন্ত্রণে ইতিবাচক সাড়া দেন। বলেন, ‘এর জন্য আমি অপেক্ষায় আছি।’
বাংলাদেশে ইস্টারলিংক সেবা উদ্বোধনের সম্ভাব্য উদ্বোধনের গুরুত্ব তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তার আশা, এই আলোচনা দেশে উন্নত স্যাটেলাইট সংযোগ চালুর পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ও উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করবে।
উভয় পক্ষ এ উদ্যোগে দ্রুত অগ্রগতি আনতে সম্মত হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, পরবর্তী কার্যক্রম সমন্বয়ে ড. খলিলুর রহমান, লরেন ড্রেয়ার ও রিচার্ড গ্রিফিথসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।