সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্রের মামলায় আপিল করে খালাস পেয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী তানভির আহমেদ আলামিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর মাহমুদুর রহমান সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “এই মিথ্যা মামলা শুধু আমাকে দীর্ঘদিন কারাবন্দি রাখার জন্য করা হয়েছিল।”
তার আইনজীবীরা মামলাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে বলেন, এই মিথ্যা মামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত। তারা আরও বলেন, দেশে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা জরুরি।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের পক্ষ থেকে খালাস চেয়ে আবেদনের ওপর যুক্তি উপস্থাপন সম্পন্ন হয়।
এ মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমান গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তার পক্ষে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন আইনজীবীরা। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসঙ্গে তাকে কারাগারে ডিভিশন দেয়ার আদেশ দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ ৫ জনের আলাদা দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য তিনজন হলেন জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ এ মামলায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলাটিতে প্রধান সাক্ষী হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ মোট ১২ জন সাক্ষ্য দেন।
আদালত দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) অভিযুক্তদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে, দণ্ডবিধির ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড বহাল থাকবে। বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, উভয় সাজা একই সঙ্গে কার্যকর হবে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, যুক্তরাজ্যসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে একত্রিত হয়ে ষড়যন্ত্র করেন। তারা যোগসাজশ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ করে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান পল্টন মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে তুরস্ক থেকে দেশে ফেরেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।