মধ্য আকাশে মুখোমুখি সংঘর্ষের পর মার্কিন সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও ৬৪ জন আরোহী নিয়ে উড়োজাহাজ ওয়াশিংটন ডিসির পটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত উদ্ধারকারী দলগুলো হিমশীতল পানিতে অনুসন্ধান চালিয়ে ১৯টি মরদেহ উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ৫৩৪২ নম্বর ফ্লাইট স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টার দিকে রোনাল্ড রিগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণের প্রস্তুতি নেয়ার সময় মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি ছিল বম্বার্ডিয়ার সিআরজে৭০০ মডেলের, যা কানসাসের উইচিটা থেকে উড্ডয়ন করেছিল। এতে ৬০ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে আমেরিকান এয়ারলাইন্স।
পেন্টাগন জানায়, দুর্ঘটনায় জড়িত হেলিকপ্টারটি ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভোয়ার থেকে উড্ডয়ন করেছিল। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার বলেন, সেনাবাহিনীর ওই হেলিকপ্টারে তিনজন মার্কিন সেনা সদস্য ছিলেন। এফএএ জানিয়েছে, তারা ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের (এনটিএসবি) সঙ্গে যৌথভাবে এই দুর্ঘটনার তদন্ত করবে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটিকে পোটোম্যাক নদীতে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় দেখা গেছে, আর হেলিকপ্টারটি উল্টে পানির নিচে চলে গেছে। ওয়াশিংটন ডিসি ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস প্রধান জন ডোনেলি বলেন, ‘প্রায় ৩০০ জন উদ্ধারকারী রাবারের নৌকায় করে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং জীবিতদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে প্রবল বাতাস ও ভাসমান বরফ থাকায় উদ্ধার কাজকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলছে।’
ঘটনার সময় জর্জ ওয়াশিংটন পার্কওয়ে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন এরি শুলম্যান। তিনি উড়োজাহাজটিকে বিধ্বস্ত হতে দেখেছেন। এরি শুলম্যান এনবিসি ওয়াশিংটনকে বলেন, ‘শুরুতে উড়োজাহাজটির অবতরণ স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ সেটি ডান দিকে বাঁক নেয় এবং তার নিচের অংশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে স্ফুলিঙ্গ নির্গত হতে থাকে, যা পুরো উড়োজাহাজকে আলোকিত করে।’
তিনি আরও বলেন, তিনি তখন বুঝতে পারেন কিছু একটা গণ্ডগোল হচ্ছে। কারণ রাতের বেলা অবতরণকালে উড়োজাহাজের নিচের অংশ এতটা দৃশ্যমান হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, স্ফুলিঙ্গগুলো ‘বিশাল রোমান মোমবাতির’ মতো দেখতে ছিল এবং তা উড়োজাহাজের সামনের অংশ থেকে লেজ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছিল। অপর একজন জিমি মাজেও বান্ধবীর সঙ্গে বিমানবন্দরের কাছের একটি পার্কে ডিনার করছিলেন। তিনি বলেন, আকাশে উজ্জ্বল সাদা আলোর ছটা দেখতে পান। তিনি প্রথমে এটিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি, তবে পরে যখন বড়সংখ্যক জরুরি সেবাকর্মী ঘটনাস্থলে আসে, তখন বুঝতে পারেন কিছু ভয়াবহ ঘটেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অবগত। তিনি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর তাঁদের আত্মার মঙ্গল করুন। উদ্ধার তৎপরতার জন্য প্রথম যারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন, অসাধারণ কাজের জন্য ধন্যবাদ।’ নিজের ট্রুথসোশ্যাল অ্যাকাউন্টে ট্রাম্প প্রশ্ন লিখেন, ‘এই ঘটনা কীভাবে ঘটল? এটি প্রতিরোধ করা উচিত ছিল। একদম ভালো হয়নি।’
ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। মনোনীত প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি জানিয়েছেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। শন ডাফি বলেন, ‘রাতে যা ঘটেছে, তা নিয়ে তদন্ত হবে।’ আমেরিকান এয়ারলাইন্সের সিইও রবার্ট আইসম এক ভিডিও বার্তায় দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য ‘গভীর শোক’ প্রকাশ করেছেন। বার্তাটি এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।