পরিবারের ছোট্ট সদস্যের খাবারের দিকে বাড়তি নজর দিতে হয়। তবে অনেক সময় শিশুখাদ্য নিয়ে অভিভাবকই বিভ্রান্তিতে পড়েন। বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও প্রচলিত ধারণার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। শিশুখাদ্য নিয়ে প্রচলিত আছে অনেক ভুল ধারণা। আর এই ভুলের ফাঁদে পড়ে অনেক শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন পুষ্টিবিদ সোনাল বাব্বার ভরদ্বাজ।
শিশুর পুষ্টি নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা: পুষ্টিবিদ বলেন, অনেক বাবা-মায়েরাই শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে গিয়ে কিছু ভুল করেন। অনেক ক্ষেত্রে সেই ভুলের উৎস চটকদার বিজ্ঞাপন আর কখনো সমাজের প্রচলিত ভুল ধারণা। শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে বলেন পুষ্টিবিদ সোনাল। তিনি কয়েকটি ভুল ধারণা তুলে ধরেছেন, যেগুলো উল্লেখ করা হলোঃ-
মাতৃদুগ্ধ বনাম ফর্মুলা মিল্ক: এখন অনেকেই শিশুকে ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ান। তবে আমরা অনেকেই জানি না এইসব শিশুর প্রয়োজন নেই। পুষ্টিবিদরা বলেন, শিশুর প্রাথমিক চাহিদা পূরণে মায়ের দুধই যথেষ্ট। সোনাল বাব্বার ভরদ্বাজ বলেন, জন্মের পর প্রথম ছয় মাস মায়ের দুধই শিশুর প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি সরবরাহ করে। মায়ের দুধে থাকা সহজপাচ্য প্রোটিন শিশুর জন্য উপকারী এবং এটি শিশুর শারীরিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শুধু তাই নয়, মায়ের দুধ শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও সহায়ক। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে ব্রেস্টফিডিং এক বছরে প্রায় ৮ লাখ শিশুর জীবন বাঁচাতে পারে এবং ২০ হাজার মায়ের স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। প্রথম ছয় মাস পর শিশুর চাহিদা বাড়তে থাকে। এ সময় মায়ের দুধের পাশাপাশি শাকসবজি বা ফলের পিউরি দেয়া যেতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত শিশুখাদ্য কি স্বাস্থ্যকর কিনা: অনেকেই মনে করেন বাজারের প্রক্রিয়াজাত শিশু খাদ্যই শিশুর জন্য সেরা। তবে সোনাল বাব্বার ভরদ্বাজ মনে করেন, এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রক্রিয়াজাত শিশু খাদ্যের বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই বাজারের আকার ১২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তবে এসব খাবারের মান নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনেক প্রক্রিয়াজাত শিশুখাদ্যে কৃত্রিম রঙ ও চিনি মেশানো হয়, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এসব উপাদান দীর্ঘমেয়াদে শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাইস সিরিয়াল শিশুর প্রথম সলিড খাবার: প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী শিশুর প্রথম সলিড খাবার হিসেবে রাইস সিরিয়াল দেয়া হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের খাবারে প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় আর্সেনিক থাকে, যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে ক্ষতিকর। এর পরিবর্তে মিষ্টি কুমড়া, গাজর, মিষ্টি আলু ও পেঁপে শিশুর প্রথম খাবার হতে পারে। এগুলো ভিটামিন এ সরবরাহ করে।
ফলের রস কি শিশুর জন্য উপকারী: একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, ফলের রস শিশুর জন্য উপকারী। তবে ফলের রসে চিনি থাকে, যা দাঁতের ক্ষয় ও ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। পানির বিকল্প নেই, বিশেষত শিশুকে শক্ত খাবারে অভ্যস্ত করার সময়।
শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে: শিশুর জন্য পুষ্টির বিষয়ে বিজ্ঞাপনের চেয়ে প্রমাণভিত্তিক তথ্যের ওপর নির্ভর করা জরুরি। সোনাল বাব্বার ভরদ্বাজ বলেন, “তাজা ফল, সবজি ও গোটা শস্য দিয়ে ঘরে তৈরি খাবারই শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর না করে শিশু বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। সঠিক তথ্য জানলে শিশুর পুষ্টির জন্য সেরা সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব।