গোপনে গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহীদের হয়ে কর্মরত গুপ্তচররা এককালে দুর্ধর্ষ বলে পরিচিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে ফাঁটল ধরাচ্ছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে।
মিয়ানমারের মাত্র এক চতুর্থাংশেরও কম ভূখণ্ডে সেনাবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে- এমনটাই উঠে এসেছে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের একটি অনুসন্ধানে।
মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূতের মতে, জান্তা এখনো প্রধান শহরগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সেগুলো ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক‘ অবস্থায় রয়েছে। যদিও গত ১২ মাসে এটি উল্লেখযোগ্য অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
এই সৈনিক-গুপ্তচররা ‘ওয়াটারমেলন‘ বা তরমুজ নামে পরিচিত। এরা বাইরে সবুজ, ভেতরে বিদ্রোহী লাল। অর্থাৎ তারা বাহ্যিকভাবে সামরিক বাহিনীর প্রতি অনুগত কিন্তু গোপনে গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করে, যাদের প্রতীকী রঙ লাল।
মধ্য মিয়ানমারে অবস্থান করা একজন মেজর জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর বর্বরতাই তাকে পক্ষ পরিবর্তনের জন্য প্ররোচনা দিয়েছিল।
জহ (আসল নাম নয়) নামে ওই মেজর বলেছেন, ‘আমি নির্যাতিত বেসামরিক ব্যক্তিদের লাশ দেখেছি। আমি কেঁদেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ওরা কিভাবে আমাদেরই জনগণের প্রতি এত নিষ্ঠুর হতে পারে? আমরা বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য রয়েছি। কিন্তু এখন আমরা মানুষ হত্যা করছি। এটি আর সেনাবাহিনী নেই। এটি এখন এমন এক শক্তি যা সন্ত্রাস করে।‘
জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
জহ প্রথমে সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন যে গুপ্তচর হওয়াই ‘বিপ্লবে যুক্ত হওয়ার সর্বোত্তম উপায়।‘
যখন নিরাপদ বলে মনে হয়, তখন তিনি বেসামরিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নেটওয়ার্ক ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস‘ (পিডিএফ)-এর কাছে অভ্যন্তরীণ সামরিক তথ্য ফাঁস করেন।
বিদ্রোহীরা ওই গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে হয় সামরিক বাহিনীর উপর অতর্কিত হামলা চালানোর জন্য কিম্বা সামরিক আক্রমণ এড়াতে। জহ নিজের বেতনের কিছু অংশও তাদের পাঠায়, যাতে তারা অস্ত্র কিনতে পারে।
জহের মতো গুপ্তচররা প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে এমন কিছু অর্জন করতে সাহায্য করেছে, যা একসময় অকল্পনীয় ছিল।
গত বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিবিসি ১৪ হাজারেরও বেশি গ্রামীণ গ্রুপে ক্ষমতার ভারসাম্য পর্যালোচনা করে দেখেছে যে সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার প্রায় চার বছর পর মিয়ানমারের মাত্র ২১ শতাংশ ভূখণ্ডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাতিগত বাহিনী এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সমষ্টি এখন দেশটির ৪২ শতাংশ ভূমি নিয়ন্ত্রণ করছে। অবশিষ্ট অঞ্চলের বেশিরভাগই অংশেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট (এসিএলইডি) জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে যে অঞ্চল রয়েছে তা ১৯৬২ সালে দেশটির প্রথম নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বনিম্ন।
জাতিগত বাহিনী এবং বেসামরিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত অভিযান সামরিক বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করেছে।
গত বছরের শুরুর দিকে ভূমিতে ব্যাপক পরাজয়ের পর কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং হ্লাইং স্বীকার করেন তার বাহিনী চাপের মুখে রয়েছে।
‘ওয়াটারমেলনের‘ ফাঁস করা গোয়েন্দা তথ্য ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। দুই বছর আগে প্রতিরোধ গোষ্ঠীর গুপ্তচরদের ক্রমবর্ধমান নেটওয়ার্ক পরিচালনা করা এবং নতুন ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য একটি বিশেষ ইউনিট শুরু করেছিল।
উইন অংয়ের (আসল নাম নয়) মতো এজেন্টরা ‘ওয়াটারমেলনের‘ ফাঁস করা তথ্য সংগ্রহ এবং সম্ভব হলে তা যাচাই করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদ্রোহী নেতাদের কাছে পৌঁছে দেন।
উইন অং একজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা, যিনি অভ্যুত্থানের পর প্রতিরোধ গোষ্ঠীর পক্ষে আসেন। তিনি জানিয়েছেন যে তারা প্রতি সপ্তাহে নতুন ‘ওয়াটারমেলন‘দের নিয়োগ করেন এবং এই নিয়োগের মূল মাধ্যম হিসেবে কাজ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
তারা গুপ্তচর হিসেবে যাদের নিয়োগ করেছেন, তাদের মধ্যে নিম্নপদস্থ সেনা থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন। তাদের আরো দাবি যে সামরিক সরকারে ‘মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে গ্রামপ্রধান স্তর পর্যন্ত‘ লুকিয়ে রয়েছে ‘ওয়াটারমেলন‘।
যাদের নিয়োগ করা হচ্ছে তারা ‘ডবল এজেন্ট‘ নয় তা নিশ্চিত করার জন্য কড়া যাচাই প্রক্রিয়া চলে।
গুপ্তচর হওয়ার নেপথ্যে ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। জহের ক্ষেত্রে কারণ ছিল ক্ষোভ। আর যাকে আমরা ‘মো‘ বলে ডাকি সেই নৌবাহিনীর কর্পোরালের ক্ষেত্রে কারণ ছিল তার সদ্য শুরু হওয়া পরিবারের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা।
সেই সময় তার গর্ভবতী স্ত্রী এর জন্য চাপ দিয়েছিলেন। তিনি বুঝিয়েছিলেন, সেনাবাহিনী হেরে যাচ্ছে এবং যুদ্ধে মো প্রাণ হারাবেন।
মো ‘ওয়াটারমেলন‘ ইউনিটের কাছে অস্ত্র ও সৈন্যদের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য ফাঁস করতে শুরু করেন।
গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহী নেতা দিভা জানিয়েছেন, এই ধরনের গোয়েন্দা তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ ইউনিটের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গনের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেয়া, যা একসময় তাদের ক্ষমতাধীন ছিল। কিন্তু লক্ষ্য থেকে তারা এখনো অনেক দূরে।
বেশিরভাগ প্রধান শহরগুলো সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ আছে। এসব শহরাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো আছে এবং রাজস্বও মেলে। দিভা বলেছেন, ‘(ইয়াঙ্গন) আক্রমণ ও দখল করার চাইতে বলা সহজ। শত্রুরা সহজে ছাড়বে না।‘
শারীরিকভাবে শহরে প্রবেশ করতে না পারায় দিভা তার জঙ্গলের বেস থেকেই ‘ওয়াটারমেলনের‘ দেয়া গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে ইয়াঙ্গনের ‘আন্ডারগ্রাউন্ড সেল‘ ব্যবহার করে টার্গেটেড অ্যাটাক (নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ) পরিচালনা করেন।
গত আগস্ট মাসে এমনই একটি অভিযানের ডাক দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলাম আমরা। ওই বিষয়ে আমাদের বিশদ বিবরণ দেয়া না হলেও জানানো হয়েছিল একজন কর্নেলকে হত্যার চেষ্টা চালাতেই ওই অভিযান।
দিভা তাদের (তার ইউনিটের সদস্যদের) বলেছিলেন, ‘শত্রুর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই এটি করা হবে। সাবধান, শত্রুরা সব দিক থেকে হেরে যাচ্ছে।‘ তার শেষ কথাগুলোর অর্থ যেহেতু সামরিক বাহিনী হেরে যাচ্ছে, তাই অনুপ্রবেশকারী এবং গুপ্তচরদের বিষয়ে তাদের সতর্ক থাকার সম্ভাবনা বেশি।
দিভা জানিয়েছেন গোপন তথ্যের উপর নির্ভর করে তার ইউনিট বেশ কয়েকটি বড় হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে। তার কথায়, ‘আমরা শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। আর এখন আমাদের সাফল্যের দিকে তাকিয়ে দেখুন!‘
কিন্তু এর জন্য মূল্যও দিতে হয়। ‘ওয়াটারমেলন‘ হিসেবে নিযুক্তদের দ্বৈত জীবনযাপন করতে হয়, যা ক্রমে আবিষ্কার করেছিলেন মো যিনি নৌবাহিনীর কর্পোরাল থেকে এখন গুপ্তচরের ভূমিকা পালন করছেন।
ইয়াঙ্গন থেকে সীমান্তবর্তী অঞ্চল রাখাইনে মোতায়েন করা হয় তাকে যেখানে প্রতিরোধ গোষ্ঠীর পক্ষে থাকা জাতিগত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে সামরিক বাহিনী। তাকে এই আতঙ্কের সাথে বাস করতে হচ্ছিল যে তার দেয়া গোয়েন্দা তথ্যের কারণে তিনি নিজেই আক্রান্ত হতে পারেন।
গত মার্চে তার নোঙর করা জাহাজে একটি প্রজেক্টাইল ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। তিনি বলেছেন, ‘দৌঁড়ানোর জায়গা ছিল না। আমরা ছিলাম খাঁচায় বন্দি ইঁদুরের মতো।‘
বিদ্রোহীদের হামলায় তার সাতজন সহযোদ্ধা নিহত হন। উইন অং স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমাদের (গুপ্তচরদের) রক্ষা করার ক্ষমতা খুবই সীমিত।‘
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে পারি না যে ওরা ওয়াটারমেলন। আর আমাদের গোষ্ঠীকে কোনো নির্দিষ্ট সামরিক কনভয়ে হামলা করা থেকে রুখতেও পারি না।‘
তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘ওয়াটারমেলন‘দের যখন এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয় তখন কিন্তু তারা বিচলিত হয় না। এমনকি উত্তরে কেউ কেউ বলেছেন, ‘এমন সময় এলে দ্বিধা করবেন না, গুলি চালাবেন।‘ কিন্তু অনেক সময় এমন পরিস্থিতই তৈরি হয়, যখন গুপ্তচররা আর বিপদ সহ্য করতে পারে না।
যখন মোকে অন্য একটি বিপজ্জনক ফ্রন্ট লাইনে পাঠানো হচ্ছিল, তখন তিনি ওয়াটারমেলন ইউনিটকে জানিয়েছিলেন তাকে যেন প্রতিরোধ গোষ্ঠী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পাচার করে দেয়া হয়। মঠ এবং সেফ হাউজের ‘আন্দারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক‘ ব্যবহার করে প্রতিরোধ গোষ্ঠী এই জাতীয় কাজ করে থাকে।
গভীর রাতে মো পালিয়ে যান। পরদিন সকালে তিনি কাজে যোগ না দেয়ায় সৈন্যরা তার বাড়িতে এসে হাজির হয়। তারা তার স্ত্রী চোকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তিনি মুখ খোলেননি।
বেশ কয়েকদিন এভাবে পালিয়ে থাকার পর মো এসে পৌঁছন দিভের একটি ঘাঁটিতে। ভিডিও কলে তাকে ধন্যবাদ জানান দিভ এবং তারপর জানতে চান, কোন ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক তিনি।
উত্তরে মো জানিয়েছিলেন যে তিনি সবেমাত্র পরিবার শুরু করেছেন। তাই যুদ্ধতে যেতে হবে না এমন ভূমিকা পালন করতে চান তিনি এবং তার পরিবর্তে সামরিক প্রশিক্ষণ সম্পর্কে তার জ্ঞান ভাগ করে নেবেন।
এর কয়েক সপ্তাহ পর তাকে থাইল্যান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তার স্ত্রী চো এবং সন্তানরাও বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। ভবিষ্যতে কোনো একদিন মোয়ের সাথে মিলিত হয়ে সেখানে একটি নতুন জীবন গড়ে তোলার আশা রাখে তার পরিবার।
সামরিক বাহিনী আগ্রাসীভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার। তার জন্য মারাত্মকভাবে একের পর এক বোমা হামলাও চালাচ্ছে।
সামরিক বাহিনীর কাছে চীন ও রাশিয়ার তৈরি যুদ্ধবিমান থাকার ফলে আকাশ পথে তারা শক্তিশালী। তারা জানে যে প্রতিরোধ গোষ্ঠী একটি সমজাতীয় গোষ্ঠী হয়ে উঠতে পারেনি এবং তাদের মধ্যে থাকা বিভেদকে কাজে লাগাতে চাইছে সামরিক বাহিনী।
জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, ‘নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে জান্তার নৃশংসতাও বেড়ে চলেছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। আক্ষরিক এবং আলঙ্কারিক দুই দিক থেকেই তারা জমি হারাতে থাকার কারণে প্রাণহানির ঘটনা… নৃশংসতা, নির্যাতন বাড়ছে।‘
এদিকে, ওয়াটারমেলন ইউনিটকে সরাতেও সামরিক বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। জহ বলেছেন, ‘যখন আমি এই সাফাই অভিযানের কথা শুনি, তখন কিছুক্ষণের জন্য থমকে গিয়েছিলাম।‘ তিনি জানিয়েছেন, চোখে পড়ার ভয়ে তিনি সব সময় সামরিক বাহিনীর কট্টর সমর্থকের মতোই আচরণ করেন। কিন্তু তিনি ভয় পাচ্ছেন এবং কতদিন লুকিয়ে থাকতে পারবেন, তা তার জানা নেই।
দলত্যাগ করা কোনো বিকল্প নয়, কারণ তিনি তার বৃদ্ধ বাবা-মাকে ছেড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত। তাই আপাতত স্থির করেছেন তিনি সামরিক গুপ্তচর হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন এবং এমন একটি দিন দেখার আশায় থাকবেন যখন বিপ্লব শেষ হবে।
যদি সেদিন আসে এবং যখন তা সত্যিই আসবে, জহ এবং মোয়ের মতো ‘ওয়াটারমেলন‘ ইউনিটের সদস্যদের তারা ভুলবেন না বলেই প্রতিজ্ঞা করেছেন উইন অং। তার কথায়, ‘ওদের প্রতি সম্মান দেখানো হবে এবং পরবর্তীকালে ওরা কী করতে চান তা বেছে নেয়ার অনুমতিও দেয়া হবে।‘
সাক্ষাৎকারের জন্য বিবিসির অনুরোধে সাড়া দেয়নি সামরিক বাহিনী।
তথ্যের বিষয়ে- বিবিসি নিযুক্ত গবেষকরা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে সামরিক নিয়ন্ত্রণের স্তর মূল্যায়নের জন্য ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪ হাজারেরও বেশি গ্রামীণ গ্রুপের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে।
জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) আয়োজিত মিয়ানমার ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট ইউনিট বা এমআইএমইউ থেকে গ্রামগুলির নাম ও সীমানার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই গবেষক দল অন্তত এমন একটি সূত্রের সাথে কথা বলেছেন, যাদের সাথে সামরিক বাহিনী বা বিরোধী দলের কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই। যেমন- শিক্ষাবিদ, দাতব্য কর্মী, সাংবাদিক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।
যে ক্ষেত্রে সূত্র বিতর্কিত তথ্য দিয়েছে, সেই ক্ষেত্রগুলোতে অননুমোদিত সূত্রকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং যাচাইয়ের জন্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সাথে তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়েছে।
যাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তাদের তিনটি সম্ভাব্য বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো,
সামরিক বাহিনী- যে অঞ্চলে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এবং সক্রিয় রয়েছে। এখানে স্থানীয় প্রশাসন রয়েছে এবং জনসেবা প্রদান করা হয় এবং সব কিছু স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে।
সঙ্ঘর্ষ চলছে যে অঞ্চলে- এই অঞ্চগুলোতে সামরিক বাহিনী উপস্থিত থাকলেও তাদের কার্যকর নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মধ্যে এমন অঞ্চলগুলো থাকতে পারে যেখানে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনসেবা পুরোপুরি কার্যকর নয় বা যে এলাকাগুলোতে সামরিক বাহিনী আঞ্চলিক এবং জাতিগত সশস্ত্র বাহিনী দুই পক্ষের প্রশাসন রয়েছে। আবার এই তালিকায় এমন অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেখানে বিরোধী বাহিনী প্রবেশ করতে এবং প্রস্থান করতে পারে এবং যেখানে এই দুই বিরোধী শক্তির মধ্যে সঙ্ঘর্ষও দেখা যায়।
প্রতিরোধ গোষ্ঠী এবং জাতিগত বাহিনী–এসব অঞ্চলে সামরিক বাহিনী মূলত অনুপস্থিত এবং তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে স্থল অভিযান চালাচ্ছে না। এসব অঞ্চলে হয় প্রতিরোধ গোষ্ঠী, জাতিগত সেনাবাহিনী বা সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্বারা সমর্থিত বেসামরিক সরকার জনসেবা প্রদান করে।
দেশটির কয়েকটি অঞ্চল অরণ্য বলে নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং সেই অঞ্চলগুলোকে গ্রামীণ গ্রুপে ম্যাপ কওরা হয়নি। সেগুলোর ভিন্ন ভিন্ন প্রশাসনিক কাঠামো রয়েছে, যা প্রধানত সম্পদ নিষ্কাশন এবং সংরক্ষণের সাথে সম্পর্কিত। যে অঞ্চলগুলোতে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত শাসন ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলোর উপর গুরুত্ব দিতে চেয়েছে বিবিসি মিয়ানমার।
বেকি ডেল, মাসকিন লিডার, ফিল লিক, ক্যালাম থমসন, পিলার টমাস, শার্লট অ্যাটউড এবং কেলভিন ব্রাউনের অতিরিক্ত প্রতিবেদন। মেথডলজিতে সহায়তা করেছেন প্রফেসর লি জোনস, কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন।
সূত্র : বিবিসি