৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট শপথ নিয়েই জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল করেছেন। স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি এ সম্পর্কিত এক নির্বাহী আদেশে সই করেন। খবর মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে বা শিক্ষা-পর্যটনসহ সাময়িক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে সন্তান জন্ম দিলে শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। তবে বাবা-মায়ের কেউ আমেরিকান নাগরিক হলে সন্তান জন্মের পরই মার্কিন নাগরিক বলে স্বীকৃতি পাবে।
আদেশে সই করার সময় ট্রাম্প স্বীকার করেন যে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার যেহেতু দেশের সংবিধানে নিশ্চিত করা আছে, তাঁর এই আদেশ আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। তিনি জানান, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব একেবারে হাস্যকর এবং তাঁর বিশ্বাস এই বিধান বদলানোর জন্য ভালো আইনগত যুক্তি আছে।
এদিকে, পূর্বঘোষণা অনুসারে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই বেশ কিছু চমক দিয়েছেন তিনি। সামনে থাকতে পারে আরও চমক।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ২০০টি নির্বাহী আদেশের ঘোষণা দিতে পারেন ট্রাম্প। দায়িত্ব গ্রহণ করে বিভিন্ন ধরনের নির্বাহী আদেশ জারি করা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের জন্য সাধারণ একটি বিষয়। এ ধরনের আদেশের আইনি ভার আছে। কিন্তু পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বা আদালত এসব আদেশ চাইলে বাতিল করতে পারেন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পরিমাণ নির্বাহী আদেশ জারি করার পরিকল্পনা করেছিলেন, তা নজিরবিহীন। আর তার অনেকটা তিনি বাস্তবায়নও করেছেন।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব নির্বাহী আদেশ ঘোষণা করেছেন ও সামনে করতে পারেন, তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
অভিবাসন: ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে যেসব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, তার মধ্যে একটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি। আরেকটি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইনসংক্রান্ত। এগুলো সই করার পরে ট্রাম্প বলেন, এসব বিষয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।
মেক্সিকো নীতি: ট্রাম্প খুব দ্রুত তাঁর ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নীতি আবারও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারেন। প্রথম মেয়াদে তিনি এই নীতি গ্রহণ করেছিলেন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থী মেক্সিকোর অধিবাসী নন—এমন প্রায় ৭০ হাজার মানুষকে এ–সংক্রান্ত শুনানি হওয়ার আগপর্যন্ত মেক্সিকোয় অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল।
সীমান্ত বন্ধ: ১৯৪৪ সালে নেওয়া পদক্ষেপটি টাইটেল ৪২ নামে পরিচিত। এর অধীন জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতে অভিবাসন কমাতে পারে মার্কিন সরকার। সবশেষ করোনা মহামারির সময় টাইটেল ৪২ ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি রোগের সন্ধানে আছে, যেটি মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত বন্ধ করার পরিকল্পনাকে ন্যায্যতা দিতে সহায়তা করবে।
মাদক চক্র: ডোনাল্ড ট্রাম্প মাদক চক্রগুলোকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আল-কায়েদা, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট এবং হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোর তালিকায় এসব চক্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সীমান্তপ্রাচীর: ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন তিনি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন। প্রাচীরটির একটি অংশ নির্মাণ করা হলেও এখনো বড় একটি অংশ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। ট্রাম্প হয়তো এবার সেই কাজ শেষ করতে পারেন।
শুল্ক: যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পোৎপাদন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আমদানি পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্কারোপের আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে চীনসহ বিভিন্ন দেশের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করেছিলেন ট্রাম্প। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সেটি বজায় রেখেছিলেন।
তবে এবার ট্রাম্প সব ধরনের আমদানি পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের আশ্বাস দিয়েছেন। এর মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসব শুল্ক ভোগ্যপণ্যকে আরও ব্যয়বহুল করতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে। কিছু দেশ এর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপের কথা ভাবছে।
ক্রিপ্টো মজুত: ট্রাম্প সব সময় ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে ছিলেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিটকয়েনের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। অনেকের বিশ্বাস, বিটকয়েনের একটি কেন্দ্রীয় মজুত গড়ে তোলার জন্য ট্রাম্প খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেল ও সোনার মতো একটি কৌশলগত মজুত। ট্রাম্পের ভাষ্য, মার্কিনদের উপকারে এটি স্থায়ী জাতীয় সম্পদ হিসেবে কাজে লাগবে।
জলবায়ু নীতি: বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও অবকাঠামো তহবিলের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা, আইন ও তহবিল কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। এটিকে তিনি তাঁর বড় অর্জনগুলোর একটি হিসেবে দেখেন।
ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, বাইডেনের নেওয়া এসব পদক্ষেপের বেশির ভাগই বাতিল করতে চান তিনি। অফশোর ও কেন্দ্রীয় ভূমিতে খননসংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন বায়ু–বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির আদেশ বাতিল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
সোমবার ক্যাপিটল হিলের রোটান্ডা কক্ষে আয়োজিত শপথ অনুষ্ঠানের মঞ্চে ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। প্রথমে আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জেডি ভ্যান্স। এরপর শপথ হয় ট্রাম্পের। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ফাস্ট লেডিরা এই শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।