spot_img

প্রাকৃতিক দুর্যোগ খোদায়ী সংকেত

অবশ্যই পরুন

এই যে ভূমিকম্প, দাবানল, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছাসের প্রলয়ঙ্করী তান্ডব, বারবার বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত- এগুলো কেন হয়? এগুলো থেকে পরিত্রাণেরই বা কী উপায়? এ বিষয়ে মানবজাতির সফলতার মৌলিক ঠিকানা ইসলামে রয়েছে কার্যকরী অনন্য নির্দেশনা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বিপর্যয় কেন আসে? এ প্রশ্নের জবাব সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে মানবসভ্যতার পথপ্রদর্শক পবিত্র কোরআন মাজিদ দিয়ে রেখেছে হূদয়গ্রাহী ভাষায়। ইরশাদ হয়েছে, জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষের কৃতকর্মের ফলশ্রুতিতেই। (আল্লাহর পক্ষ থেকে বিপর্যয় এসেছে) তিনি তাদের কৃতকর্মের শাস্তির খানিকটা স্বাদ (দুনিয়াতেই) আস্বাদন করিয়ে দেন। যাতে তারা (অবাধ্যতা থেকে) ফিরে আসে। (সুরা রুম, আয়াত : ৪১)

আয়াতের বার্তা স্পষ্ট। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা সামগ্রিক বিপর্যয়ের মৌলিক কারণ- আল্লাহর অবাধ্যতা। আর বিপর্যয় থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়- আল্লাহর অবাধ্যতার অন্ধকার থেকে তাঁর আনুগত্যের আলোকময় পথে ফিরে আসা। এভাবে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিপর্যয়ের মৌলিক কারণ হিসেবে পাপাচার, সীমালঙ্ঘন তথা আল্লাহর অবাধ্যতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং পরিত্রাণের উপায় হিসেবে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আলোকময় নির্দেশনাই প্রদত্ত হয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনো একটি পরীক্ষা, যার মাধ্যমে মানুষকে ধৈর্যধারণ এবং নিজেদের কর্মের ফলাফল চিন্তা করতে বলা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে মানবজাতি শেখে তাদের গৌরবের অহংকার থেকে নামতে এবং আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস এবং আনুগত্যের মনোভাব তৈরি করতে।

পৃথিবীর বহু সভ্যতা, জনপদ, শক্তিধর রাজা-বাদশারা এই প্রলয়ঙ্কারী দূর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে, এক সময়ের প্রভাবশালী জনপথ ধুলোয় মিশে গেছে।

যেমন পম্পেই নগর। ষষ্ঠ এবং সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সূচনা এই চোখধাঁধানো নাগরিক সভ্যতাটার। একাধারে ব্যবসা, সংস্কৃতি আর বিনোদনের কেন্দ্র। মঞ্চমন্ডপ, ক্রীড়াগার, বন্দর আর তত্কালীন প্রযুক্তিগত উত্কর্ষের শহর।
কিন্তু ধীরে ধীরে এটি তারুণ্যের আনন্দ আর যৌবনের বাঁধভাঙ্গা উল্লাসের এক কেন্দ্র হয়ে ওঠে। অবাধ্যতা ও অশ্লীলতায় হারিয়ে যাওয়ার জনপথ ছিল এটি। অভয়ারণ্য ছিল মুক্তমন আর সস্তা শরীরের। এই শহর ছিল পতিতাদের, এই শহর ছিল পতিতদের। এই শহর ছিল সমকামের, শিশুকামের, অযাচারের আর অবাধ যৌনাচারের। মদ, মাংস আর মাত্সর্যের যতোসব আনন্দ চিন্তা করা যায় আর যা কিছু চিন্তা করা যায় না, সেই সবকিছু খুঁজে পাবার শহর ছিল এই পম্পেই।

অবশেষে ৭৯ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাস, ভিসুভিয়াস পর্বত প্রচন্ড শক্তিতে বিস্ফোরিত হয়, প্রতি সেকেন্ডে পনের লক্ষ টন গলিত পাথর, গুড়ো হয়ে যাওয়া আকরিক আর তরল আগুন ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল মাটি থেকে প্রায় ২১ মাইল উঁচুতে। নিঃসরিত হয়েছিল হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার চাইতে এক লক্ষ গুন বেশি তাপ শক্তি। প্রথম বিস্ফোরণের সময় তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ৩০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে যা এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে কেড়ে নিয়েছিল হাজারো মানুষের জীবন। আনন্দ-উচ্ছাসে মত্ত হাজারো মানুষ শুধু প্রচন্ড তাপের কারণে সৃষ্ট হওয়া থার্মাল শকে, তীব্র খিচুনিতে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে শরীর বেঁকে যাওয়ার মতো সময়টুকু পেয়েছিল। সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যেই প্রকট মৃত্যুযন্ত্রণা অনুভব করার মতো সময়টুকু পেয়েছিল। তারপর আল্লাহর নাফরমানদের শরীরগুলো চাপা পড়ে গিয়েছিল ২১ ফিট গভীর আগ্নেয় ছাইয়ের নিচে।

আল্লাহু আকবার ! আল্লাহর নির্দেশে যেমন শুণ্য থেকে বিশাল সাম্রাজ্য দাঁড়িয়ে যেতে পারে, তেমনি আল্লাহর হুকুমেই সাজানো শহরে মুহূর্তে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দেন। যখন তিনি কোনো কাজের আদেশ করেন, তখন একথাই বলেন, হয়ে যাও, তা হয়ে যায়।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৪৮)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি কোন কার্য সম্পাদনের সিন্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে শুধু একথাই বলেন, ‘হয়ে যাও’ আর তত্ক্ষণাত্ তা হয়ে যায়। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১১৭)

কোরআনের বর্ণিত আরেকটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি কওমে লুত। তাদের যখন আল্লাহর নাফরমানি সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছিল, তখন তারা তাচ্ছিল্য করেছিল। পবিত্র কোরআনে তাদের সেই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘তার জাতির (লুত আ.-এর সম্প্রদায়ের) লোকদের এটা ছাড়া আর কোনো জবাবই ছিলনা যে, এদের তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও, এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র রাখতে চায়। (সুরা আরাফ, আয়াত : ৮২)

যার ফলে তাদের ওপর আল্লাহর আজাব এসে গেল এবং তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হলো। পবিত্র কোরআনে তাদের ধ্বংসের ভয়াবহতা কতটা ছিল সে ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি জনপদের উপরকে নীচে উল্টে দিলাম এবং ক্রমাগত পোড়ামাটির পাথর বর্ষণ করলাম। (সুরা হুদ, আয়াত : ৮২)

হুদ (আ.) আদ জাতিকে সতর্ক করেছিলেন কিন্তু তারা উদ্ধত হয়ে বলেছিলো- আর আদ সম্প্রদায়, তারা জমিনে অযথা অহংকার করত এবং বলত, আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী কে আছে? তবে কি তারা লক্ষ্য করেনি যে, নিশ্চয় আল্লাহ যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? আর তারা আমার আয়াতগুলোকে অস্বীকার করত।’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ১৫)

অতঃপর মহান আল্লাহর চুড়ান্ত গজব প্রাকৃতির দুর্যোগের বেশে এসে তাদের চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আদ-এর ঘটনাতেও (নিদর্শন আছে)। আমি তাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম অকল্যাণের বাতাস। ঐ বাতাস যার উপরে এসেছিল তাকে রেখে যায়নি, বরং সবকিছুকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিল। (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৪১-৪২)

আদ জাতির পর পৃথিবীতে শিল্প ও সংস্কৃতিতে অপ্রতিদন্দ্বী ছিল সামুদ জাতি। মহান আল্লাহ তাদের বহু নিয়ামত দিয়েছিল। কিন্তু বেইনসাফ, কুফর-শিরকে তাদের সমাজ নষ্ট হয়ে যায়। সমাজের নষ্ট লোকেরা নেতৃত্বে এসে সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে সালেহ (আ.)-এর কাছে পাঠানো আল্লাহর নিদর্শন উস্ট্রীকে তারা হত্যা করে ফেলে। পরবর্তীতে সালেহ (আ.) তাদের আল্লাহর আজাবের ব্যাপারে সতর্ক করে। কিন্তু তা ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেয়। অবশেষে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ওপর চূড়ান্ত আজাব চলে আসে। পবিত্র কোরআনে তাদের সেই আজাবের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারপর সীমা লঙ্ঘনকারীদের মহানাদ আঘাত করে। ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে থাকে (ধ্বংস হয়ে যায়)। যেন তারা কখনোই সেখানে বসবাস করেনি। জেনে রেখো, সামুদ জাতি তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করেছিল। আরো জেনে রেখো, ধ্বংসই হলো সামুদ জাতির পরিণাম।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৬৭-৬৮)

প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু একেকটি ক্ষতির ঘটনা নয়, বরং এটি আমাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। আমাদের উচিত এই দুর্যোগগুলোকে নিছক প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে না দেখে নিজেদের বদ আমলের ফলাফল হিসেবে বিবেচনা করা এবং নিজেদের পাপের পথ থেকে ফিরিয়ে এনে আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তাওবা করা। আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা। ধৈর্য ধারণ করা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন।

সর্বশেষ সংবাদ

আবারো হোটচ খেল বার্সেলোনা

ফের মলিন বার্সা। স্প্যানিশ সুপার কাপ ও কোপা দেল রেতে উড়তে থাকা কাতালানরা ছন্দ হারিয়েছে লা লিগায় এসে। টেবিলের...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ