ইসরায়েলি হামলায় নিহত চিকিৎসক মাহমুদ আবু নুজাইলার লেখা কিছু কথা পড়ে শোনানোর সময় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বৈঠকে কথা বলার সময় জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার ফিলিস্তিনি চিকিৎসক মাহমুদ আবু নুজাইলা ২০২৩ সালে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হওয়ার আগে লিখে গিয়েছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে, গল্পটা সেই বলবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। আমাদের মনে রেখ।’
হৃদয়স্পর্শী এই কথাগুলো লেখা ছিল গাজার আল আওদা হাসপাতালের সাদা একটি বোর্ডে। এই বোর্ডে সাধারণত রোগীর অস্ত্রোপচার কীভাবে করা হবে, তা লেখা থাকে। চারপাশে মুহুর্মুহু হামলা চলছিল, মৃত্যু যখন নিশ্চিত, সেই মুহূর্তে এই কথাগুলো লিখেছিলেন নুজাইলা।
আয়ারল্যান্ড ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফ্রন্ট লাইন ডিফেন্ডারস (এফএলডি) জানিয়েছে, ২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় মাহমুদ আবু নুজাইলা সামনে থেকে আহতদের চিকিৎসা করছিলেন। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন তিনি।
২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর আল আওদা হাসপাতালে ইসরায়েলি ওই বিমান হামলায় নুজাইলাসহ আরও দুজন চিকিৎসক ও মানবাধিকার কর্মী নিহত হন।
এফএলডি বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ তলাকে টার্গেট করার সময় নুজাইলা রোগীদের চিকিৎসা করছিলেন। হাসপাতালটি উত্তর গাজার সর্বশেষ অবশিষ্ট আংশিক কার্যকরী হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি ছিল।
রাষ্ট্রদূত মনসুর গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মনসুর বলেন, এই গণহত্যা বন্ধ করা আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব।
তিনি বলেন, জীবন বাঁচানোর বাধ্যবাধকতা আপনাদের (নিরাপত্তা পরিষদ) রয়েছে। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিলিস্তিনের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সেই কাজটা হৃদয় দিয়ে করছেন। তারা ভুক্তভোগী মানুষগুলোকে ছেড়ে যাননি। (আপনারাও) তাদের ছেড়ে যাবেন না। ইসরায়েলকে দায়মুক্তি দেওয়া বন্ধ করুন। জাতিগত নিধন বন্ধ করান। নিঃশর্তভাবে এখনই এই আগ্রাসনের পরিসমাপ্তি ঘটান।
শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য গাজার হাসপাতালগুলোতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘে পাকিস্তানের দূত আসিম ইফতিখার নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মী, রোগী ও আহতদের ইচ্ছাকৃতভাবে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা মানবিক আইনের প্রতিটি নীতিবিরুদ্ধ। এর কোনো যৌক্তিকতাই নেই।
গত সপ্তাহে কামাল আদওয়ান হাসপাতালের ওপর হামলা এবং এর পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়াকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটকের পর নিরাপত্তা পরিষদে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার ৪৫৬তম দিনে ৪৫ হাজার ৬৫৮ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৫৮৩ জন। প্রতিবেশী লেবাননে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৮ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল এবং ২৭ নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি চুক্তিও লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে।
বোমা বিধ্বস্ত বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে প্রায় ১১ হাজার ফিলিস্তিনি চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আরও ১০ হাজার মানুষকে অপহরণ করে ইসরায়েলি টর্চার চেম্বারে রাখা হয়েছে।