মুমিনের জন্য জীবনের প্রতিটি নতুন দিনই মহান আল্লাহর নিয়ামত। প্রতিটি দিন তাকে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে অগ্রগামী হতে সাহায্য করে। নেক আমলের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহযোগিতা করে। এর বিপরীতে অবিশ্বাসীর জন্যও প্রতিটি দিন নিয়ামত, যা তাকে পাপের পথ থেকে তাওবা করে মহান আল্লাহ কাছে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়। প্রতিটি মুহূর্ত তাকে ডেকে বলে এখনো সময় আছে সাচ্ছা তাওবা করে কল্যাণের পথে ফিরে এসো।
কিন্তু যারা দুর্ভাগা তারা এই নিয়ামতের যথাযথ সুফল ভোগ করতে পারে না। বরং যারা আল্লাহর নাফরমানিতে মত্ত হয়ে থাকে, আল্লাহর পথে ফিরে আসে না, তাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি দিন তাদের বদ আমলের পাল্লা ভারি করে। যদি সে মৃত্যুর আগে আগে তওবা না করে, তবে তাদের যদি প্রতিটি দিন অভিশাপ হয়ে থাকে। যে দিনগুলো তাদের মহান আল্লাহর দরবারে নিকৃষ্ট করে তোলে।
তাদের জন্য প্রতিটি সকাল জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একেকটি অগ্নিদরজা মাত্র। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু বকর (রা.) বলেন, কোনো এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। সে আবার প্রশ্ন করল, মানুষের মধ্যে কে নিকৃষ্ট? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩০)।
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিন লোকের বয়স তার কল্যাণই বাড়িয়ে থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭১২)
প্রতিটি সকাল মুমিনের জন্য অগণিত কল্যাণের দ্বার উন্মোচিত করে। যদি তারা তার মূল্যায়ণ করতে পারে, তবে তাদের তাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে, রিজিকে বরকত দান করে। এ জন্যই নবীজি (সা.) তাঁর কন্যা ফাতেমা (রা.)-কে বলেছেন, মা মণি! ওঠো! তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ করো! অলসদের দলভুক্ত হয়ো না। কেননা আল্লাহ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের মধ্যে রিজিক বণ্টন করে থাকেন। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব : ২৬১৬)
তাই মুমিনের উচিত, প্রতিটি নতুন সকালকে মহান আল্লাহর ইবাদত ও শোকরের মাধ্যমে যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং সারাদিন নিজেকে আল্লাহর নাফরামানি থেকে মুক্ত রাখার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তান যখন সকালে উপনীত হয়, তখন তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিভকে অত্যন্ত বিনীতভাবে নিবেদন করে যে, ‘তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কারণ, আমাদের ব্যাপারসমূহ তোমার সাথেই সম্পৃক্ত। যদি তুমি সোজা সরল থাক, তাহলে আমরাও সোজা-সরল থাকব। আর যদি তুমি বক্রতা অবলম্বন কর, তাহলে আমরাও বেঁকে বসব।’ (রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস : ১৫২৯)
এই কাজে কোনো ভাবেই দেরি করা উচিত নয়, কারণ আমরা কেউই জানি না, মহান আল্লাহ আমাদের আরেকটি নতুন সকাল পর্যন্ত হায়াত রেখেছেন কিনা! তাই প্রতিটি নতুন সকালেই আমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করা উচিত। জীবনকে গোছানোর জন্য আল্লাহর দেওয়া নতুন দিন ও নতুন সুযোগটিকে কাজে লাগানো উচিত।
ইবনে উমার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার শরীর স্পর্শ করে বললেন, পৃথিবীতে এমনভাবে দিনযাপন কর, যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী মুসাফির। তুমি নিজেকে কবরবাসীদের অন্তর্ভূক্ত মনে কর। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ইবনে উমার (রা.) আমাকে বলেন, তুমি সকালে উপনীত হয়ে বিকালের জন্য নিজেকে অস্তিত্ববান মনে করো না এবং বিকালে উপনীত হয়ে সকালের জন্য নিজেকে অস্তিত্ববান মনে করো না। অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তোমার সুস্থতার এবং মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনের সুযোগকে কাজে লাগাও। কেননা, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি তো জান না, আগামীকাল তুমি কি নামে অভিহিত হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩৩)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।