শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো গুদামে দীর্ঘদিন ধরে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ পড়ে থাকার কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিরাপদে রাখা হয়নি, এবং তাদের অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে ঢাকা কাস্টমস এসব অস্ত্র দ্রুত প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের জন্য চেষ্টা করছে, এবং এর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে অনুরোধও করেছে। তবে, বিভিন্ন জটিলতার কারণে অস্ত্রগুলোর স্থানান্তর সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোবারা খানম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, গুদামে কিছু অস্ত্র পড়েছিল, যেগুলো সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের জন্য এনবিআরের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, এসব অস্ত্র পূর্ববর্তী কমিশনারের আমলে জমা পড়েছিল এবং তার পরবর্তী দায়িত্বে এসে তিনি এগুলো সরানোর চেষ্টা করছেন।
পরে ঢাকা কাস্টম হাউসের সাবেক কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বর্তমানে কাস্টমসের গুদামে ৭৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৯৭ হাজার ৮৩৫টি গোলাবারুদ, ১৫ কেজি বন্দুকের গুলি, ছয়টি খালি ম্যাগাজিন, চারটি এয়ারগান ও পাঁচটি তরবারি রয়েছে, যেগুলি বিমান ডিসপোজাল গুদামে ইনভেন্টরি পরীক্ষার সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। অধিকাংশ অস্ত্র কোরিয়া, জার্মানি এবং ইতালির তৈরি।
ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের সহায়তায় অস্ত্রগুলোর প্রকৃতি ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে, দীর্ঘসময় গুদামে পড়ে থাকার কারণে অধিকাংশ অস্ত্র ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, অনেক অস্ত্রে মরিচা ধরেছে বা ভেঙে গেছে। নতুনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে এমন অস্ত্রের সংখ্যা কম।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, এসব অস্ত্র নিলাম বা ধ্বংস করা সম্ভব নয়, তাই এগুলো সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে, এই প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল, কারণ নমুনা পরীক্ষা ও পরবর্তী সিদ্ধান্তের পরেই এগুলোর নিরাপদ হস্তান্তর সম্ভব।
এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব অস্ত্র সেনাবাহিনী বা অন্য কারো পক্ষে ব্যবহারের সুযোগ কম। একমাত্র সমাধান হলো ধ্বংস করা। আর এটি করতে হবে সেনাবাহিনীর সহায়তায়। কারণ তাদের কারিগরি দক্ষতা রয়েছে। প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত এসব অস্ত্র সেনাবাহিনীকে দেওয়া হলে তারা নিরাপদে এগুলো ধ্বংস করতে পারবে। এত বিপুলসংখ্যক বিপজ্জনক পণ্য দীর্ঘদিন বিমানবন্দরের ভেতরে পড়ে থাকায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আইএটিএ নির্দেশনা অনুযায়ী, শাহজালাল বিমানবন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, কিন্তু এই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না, ফলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে।
এই বিষয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ কামরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অনুপ কুমার তালুকদার এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন।
নাম প্রকাশ না করে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আর্মড ফোর্সেস বিভাগ এগুলো ডিসপোজাল করবে। কিছু জটিলতার কারণে এখনো হস্তান্তর করা যায়নি। ডিসপোজালের জন্য কাস্টমসের যে মালপত্র রয়েছে, সেগুলোও পড়ে আছে বিমানবন্দরে। সবাই বিমানবন্দরকে গুদাম বানিয়ে ফেলেছে। প্রতি মাসের সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে যার মালপত্র সে যদি না নেয়, আমাদের কী করার আছে!’