spot_img

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক

অবশ্যই পরুন

আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক। কেউ কাউকে চেনে না, প্রতিবেশীর হক আদায় করে না। অথচ ইসলামে প্রতিবেশীর প্রতি সম্পর্কের গুরুত্ব অত্যন্ত উচ্চমানের। এটি সমাজের শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেশীর আরবি প্রতিশব্দ ‘জার’ এবং ইংরেজি প্রতিশব্দ Neighbour. পারিভাষিক অর্থে A person who lives next to you or near you. ‘তোমার পরে বা পার্শ্বে বসবাসকারী লোক।

ইবনুল মানজুর (রহ.) তার বিখ্যাত ‘লিসানুল আরব’ গ্রন্থে বলেন, ‘প্রতিবেশী হচ্ছে যে ব্যক্তি আইনত তোমার পার্শ্বে অবস্থান করছে, সে মুসলিম হোক বা কাফের, পুণ্যবান হোক বা পাপী, বন্ধু হোক বা শত্রু, দানশীল হোক বা কৃপণ, উপকারী হোক বা অনিষ্টকারী, আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয়, দেশী হোক বা বিদেশী। প্রতিবেশী গণ্য হওয়ার সীমা: কত দূর এলাকার অধিবাসীরা প্রতিবেশী হিসাবে গণ্য হবে—এ সম্পর্কে বিভিন্ন অভিমত পাওয়া যায়। হাসান (রা.) বলেন, নিজের ঘর থেকে সম্মুখের ৪০ ঘর হলো প্রতিবেশী।

কোরআন ও হাদিসে প্রতিবেশীর অধিকার, মর্যাদা এবং তাদের প্রতি সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘আর আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করো না, এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন এবং নিকটবর্তী প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬) এখানে আল্লাহ প্রথমে তাঁর ইবাদত করার কথা বলেছেন, তারপর মাতা-পিতার অধিকার, আত্মীয়-স্বজনের পর প্রতিবেশীর অধিকার নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এটি পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করে যে প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার ইসলামের একটি মূলনীতি। ইসলামের এই দৃষ্টিভঙ্গি একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে প্রতিবেশী কেবল পাশের বাসিন্দা নয়, বরং একজন সহযাত্রী এবং সহানুভূতিশীল সত্তা হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেরা সে, যে তার প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০২০) আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠায় ইসলাম প্রতিবেশীর প্রতি খোঁজখবর নেওয়ার এবং সদ্ব্যবহার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে খাদ্য দেবে, সে আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৫৭)।

প্রতিবেশীর প্রতি ইসলামের মনোভাব এতটাই গভীর ছিল যে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘জিবরিল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর অধিকার বিষয়ে এত বেশি তাগিদ দিয়েছেন যে আমি মনে করেছিলাম তিনি প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৯)।

এসম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, ‘অমুক নারী বেশি সালাত পড়ে, সিয়াম পালন করে এবং দান-সদকা করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তবে সে নিজের মুখের দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়। তিনি বলেন, সে জাহান্নামি।

লোকটি আবার বলল, হে আল্লাহর রাসুল! অমুক নারী সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে সে কম সিয়াম পালন করে, দান-সদকাও কম করে এবং সালাতও কম আদায় করে। তার দানের পরিমাণ হলো পনীরের টুকরা বিশেষ। কিন্তু সে নিজের মুখ দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয় না। তিনি বলেন, সে জান্নাতি।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৯৬৭৫)।

ইসলামের চোখে প্রতিবেশী শুধু একজন পাশের বাসিন্দা নয়, বরং একজন সহযাত্রী, সহানুভূতিশীল ও সহায়ক সত্তা হিসেবে বিবেচিত। সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার কোনো বিকল্প নেই।

সর্বশেষ সংবাদ

জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ সরকারের

জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ