ধন-সম্পদ মহান আল্লাহর দান। তাই ধন-সম্পদ ও তার নিরাপত্তা রক্ষায় আল্লাহকে খুশি করার বিকল্প নেই। ধন-সম্পদ বৃদ্ধি ও তার নিরাপত্তা রক্ষার অন্যতম একটি পদ্ধতি হলো, আল্লাহর দেওয়া সম্পদ সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহ রাস্তায় ব্যয় করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বল- আমার প্রতিপালকই তাঁর বান্দাহদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছে রিযক প্রশস্ত করেন, আর যার জন্য ইচ্ছে সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু (সত্ কাজে) ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ৩৯)
তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আছে, যা কিছু ব্যয় কর, আল্লাহ তাআলা স্বীয় অদৃশ্য ভাণ্ডার থেকে তোমাদেরকে তারা বিনিময় দিয়ে দেন। এই বিনিময় কখনও দুনিয়াতে, কখনও পরকালে এবং কখনও উভয় জাহানে দান করা হয়।
নিয়মিত দান-সদকা করার একটি উপকারিতা হলো, এর মাধ্যমে ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়। সদকাকারীর নিরাপত্তার জন্য ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (বুখারি, হাদিস : ১৪৪২)
এ ছাড়াও নিয়মিত সদকাকারীর সম্পদ রক্ষায় আল্লাহর পক্ষ থেকে আসমানি সাহায্য আসে। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে নাবী (সা.) বলেন, একদিন এক লোক কোনো এক মরুপ্রান্তরে সফর করছিলেন। এমন সময় অকস্মাত্ মেঘের মধ্যে একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন যে, অমুকের বাগানে পানি দাও। সাথে সাথে ঐ মেঘ খণ্ডটি একদিকে সরে যেতে লাগল। এরপর এক প্রস্তরময় ভূমিতে বৃষ্টি বর্ষিত হল। ঐ স্থানের নালাসমূহের একটি নালা ঐ পানিতে সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হয়ে গেল। তখন সে লোকটি পানির অনুগমন করে চলল। চলার পথে সে এক লোককে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেল যিনি কোদাল দিয়ে পানি বাগানে সবদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ দেখে সে তাকে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার নাম কি? সে বলল, আমার নাম অমুক, যা তিনি মেঘখণ্ডের মাঝে শুনতে পেয়েছিলেন। তারপর বাগানের মালিক তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম জানতে চাইলে কেন? উত্তরে সে বলল, যে মেঘের এ পানি, এর মাঝে আমি এ আওয়াজ শুনতে পেয়েছি, তোমার নাম নিয়ে বলছে যে, অমুকের বাগানে পানি দাও। এরপর বলল, তুমি এ বাগানের ব্যাপারে কি করো? মালিক বলল, যেহেতু তুমি জিজ্ঞেস করছ তাই বলছি, প্রথমে আমি এ বাগানের উত্পন্ন ফসলের হিসাব করি। অতঃপর এর এক তৃতীয়াংশ সদকা করি, এক তৃতীয়াংশ আমি ও আমার পরিবার-পরিজনের জন্য রাখি এবং এক তৃতীয়াংশ বাগানের উন্নয়নের কাজে খরচ করি। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৬৩)
সদকা যে শুধু দুনিয়ার বিপদাপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করে তাই নয়, বরং পরকালেও সদকার সুফল ভোগ করা যায়। কিয়ামতের কঠিন দিন সদকাকারীরা তার কৃত সদকার ছায়ায় আশ্রয় পাবে বলে হাদিস শরীফে পাওয়া যায়। উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, হাশরের ময়দানে বিচারকালে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের দানের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে থাকবে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ১২৯৫)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিয়মিত সদকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।