আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বৃহস্পতিবার ইরানের শীর্ষ কূটনীতিকের সাথে দেখা করেছেন। তিনি নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে তেহরানে পারমাণবিক আলোচনা শুরু করেছিলেন।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে তার প্রথম মেয়াদের সময় ট্রাম্প তার ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি প্রয়ৈাগ করে, ইরানের উপর মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। ওই সময় ২০১৫ সালের একটি ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তিবলে প্রত্যাহার করা মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো দেশটির ওপর পুনরায় আরোপ করা হয়েছিল।
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, ‘গ্রোসি দেশটির শীর্ষ পরমাণু ও রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’ তিনি বুধবার রাতে তেহরানে পৌঁছেছেন।
গ্রোসি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাথে তার বৈঠককে ‘অপরিহার্য’ বলে অভিহিত করেছেন। ২০১৫ সালের পরমাণু আলোচনায় আরাঘচি ইরানের প্রধান আলোচক ছিলেন। ওই আলোচনার মাধ্যমেই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
আরাঘচি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ও খোলামেলা’ বৈঠকটিতে পরমাণুবিস্তার রোধ চুক্তি’র (এনপিটি) প্রতি ইরানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।
তিনি তার পোস্টে বলেন, ‘আমরা সাহস ও সদিচ্ছার সাথে এগিয়ে যেতে সম্মত হয়েছি। ইরান তার শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার টেবিল থেকে কখনোই সরে আসেনি।’
তিনি বলেন, ইরান তার ‘জাতীয় স্বার্থ’ ও ‘অবিচ্ছেদযোগ্য অধিকারের’ ওপর ভিত্তি করে ‘আলোচনা করতে ইচ্ছুক। তবে ‘চাপ ও ভয় দেখানো হলে ইরান আলোচনা করতে প্রস্তুত নয়।’
তাসনিম বার্তা সংস্থা জানায়, গ্রোসি ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামির সাথেও দেখা করেছেন।
তেহরান থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, আইএইএ প্রধানের ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সাথে দেখা করার কথা রয়েছে। এটি গ্রোসির চলতি বছর তেহরানে তার দ্বিতীয় আর ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সফর।
২০১৮ সালে ট্রাম্প একতরফাভাবে ২০১৫ চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। ওই চুক্তিটির আওতায় ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির উপর বিধিনিষেধ মেনে চলার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেয়েছিল। চুক্তিটি ইরানকে অস্ত্রের সক্ষমতা বিকাশ রোধ করার জন্য করা হয়েছিল। ইরান তার পরমাণু অস্ত্র তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে বলে পশ্চিমাদের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
পরের বছর ইরান ধীরে ধীরে চুক্তির অধীনে যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছিল, তা থেকে সরে আসতে শুরু করে। ওই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশটি ৩.৬৫ শতাংশের উপরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না।
আইএইএ জানিয়েছে, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার মজুদ উল্লেখযোগ্যভাবে ৬০ শতাংশে বাড়িয়েছে। এটি এমন একটি স্তর- যা আন্তর্জাতিক সতর্কতা তৈরি করেছে। কারণ এটি একটি পারমাণবিক ওয়ারহেডের জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ স্তরের অনেক কাছাকাছি।
মার্কিনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান বিশেষজ্ঞ আলি ওয়ায়েজ বলেন, তেহরান ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মত পার্থক্যের কারণে গ্রোসি পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাওয়া রোধ করতে যা করা সম্ভব, তাই করবেন।
ইরান এই অচলাবস্থার জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেছে। বুধবার ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে, ইরান নয়। ট্রাম্প একবার সর্বোচ্চ চাপর প্রয়োগ করেছিলেন। তিনি বুঝেছেন যে এটি করে কোনো কাজ হয়নি।’
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেন, ইরান ‘তার পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য আগের চেয়ে বেশি উন্মুক্ত’। কাটজের মন্তব্যের ঠিক কয়েকদিন পরেই গ্রোসি’র এই সফর।
গাজায় ইসরাইল ও ইরানের মিত্র হামাস এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধের সময় উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক মাসগুলিতে চিরশত্রু ইরান ও ইসরাইল পরস্পরকে লক্ষ্য করে সরাসরি হামলা চালায়।
সূত্র : বাসস