ভুল-ত্রুটি, দোষ-গুণ মিলিয়েই মানুষ। পৃথিবীতে কেউ এসবের ঊর্ধ্বে নয়। তবে মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো অন্যের ভালো কাজগুলোয় সমর্থন দেয়া এবং কারও দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান না করা। তবে বর্তমান সময়ে অনেকের মধ্যেই পান থেকে চুন খসলেই একজনের কথা অন্যজনের কাছে গিয়ে বলা কিংবা অন্যের দোষ খোঁজার প্রবণতা দেখা যায়। যা মোটেও উচিত নয়।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক ধারণা থেকে বিরত থাকো। কতক ধারণা পাপের অন্তর্ভুক্ত। তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না, একে অন্যের অনুপস্থিতিতে দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো সেটাকে ঘৃণাই করে থাকো। আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহ খুব বেশি তওবা কবুলকারী, অতি দয়ালু। (সুরা হুজরাত, আয়াত: ১২)
আবার যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কারও দোষ-ত্রুটি খুঁজে সেগুলো অন্যের কাছে গিয়ে বলে, আখিরাতে তার জন্য রয়েছে ভয়ংকর শাস্তি। ইবন আবূ উমার (রহ.) হাম্মাম ইবন হারিছ (রহ.) সূত্রে বর্ণনা করেন, একবার এক ব্যক্তি হুযায়ফা ইবন ইয়ামান (রা.) এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন তাকে বলা হলো, এই ব্যক্তি প্রশাসকদের নিকট লোকদের কথা লাগায়। এ সময় হুযায়ফা (রা.) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (তিরমিজী, হাদিস: ২০৩২)
অপর হাদিসে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, আমার সব উম্মত মাফ পাবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয়ই এ বড়ই ধৃষ্টতা যে, কোনো ব্যক্তি রাতে অপরাধ করলো যা আল্লাহ গোপন রাখলেন, কিন্তু সে ভোর হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এমন এমন কর্ম করেছি। অথচ, সে এমন অবস্থায় রাত অতিবাহিত করল যে, আল্লাহ তার কর্ম গোপন রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার ওপর আল্লাহর পর্দা খুলে ফেলল। (সহিহ বুখারি, ৫৬৪৩)
প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো কারও দোষ-ত্রুটি না খোঁজা। আবার দুনিয়াতে কারও দোষ গোপন রাখলে আখিরাতে বিশেষ পুরস্কারও রয়েছে। উমাইয়া ইবনু বিসতাম আয়শী (রহ.) আবূ হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে বান্দা দুনিয়াতে অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন রেখেছেন, কেয়ামত দিবসেও আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ২৫৪৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৩৫৮-৫৯)
তবে মনে রাখতে হবে, যেকোনো সম্পর্ক যাতে নষ্ট না হয় এ জন্য ছোটখাটো দোষ-ত্রুটির ক্ষেত্রে উপরোক্ত হাদিসগুলো প্রযোজ্য, কোনো ধরনের অপরাধ গোপন করার ক্ষেত্রে এমন আদেশ দেয়া হয়নি। সুতরাং, অপরাধের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিবাদের পাশাপাশি বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন হাদিস এসেছে।