মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরিতে দ্বিতীয় ওয়ানডে তিনবার বন্ধ হলো। দারুণ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের ইনিংসে অন্ধকার ঘনাতে দেননি মুশফিকুর রহিম। তার ঝলকে পাওয়া পুঁজি নিয়ে লঙ্কানদের দিশেহারা করেন দেন বোলাররা। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা পুরো দল মিলে করতে পেরেছে মুশফিকের একার চেয়ে সামান্য কিছু বেশি রান।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ডি/এল মেথডে বাংলাদেশ জিতেছে ১০৩ রানের বড় ব্যবধানে। তামিম ইকবালের দলের ২৪৬ রানের জবাবে কুসল পেরেরারা শেষ দিকের বৃষ্টি বাধার পর থামেন ৯ উইকেটে ১৪১ রানে।
এতে তিন ম্যাচ সিরিজ এক ম্যাচ বাকি থাকতেই নিশ্চিত হয়ে গেল। শ্রীলঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথমবার কোন সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
১২৭ বলে ১২৫ রান করে এই ম্যাচেও বাংলাদেশের নায়ক মুশফিক। বোলিংয়ে ৩ উইকেট করে নিয়ে পার্শ্ব নায়কের ভূমিকায় মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজরা। ২ উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
অথচ দিনের শুরুটা এমন স্বস্তির নয়। এক ওভারের মধ্যে সাকিব আর তামিমকে হারিয়ে কাঁপছিল বাংলাদেশের ইনিংস। চরম বিপর্যস্ত সেই শুরুটা নিখুঁত বুননে আলো ঝমমলে করেন মুশফিক।
লিটন দাস থিতু হয়ে রানে ফেরার সুযোগ হারান। পাঁচে নেমে মোসাদ্দেক হোসেন সুযোগ নিতে পারেননি। আগের ম্যাচের মতো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেই প্রতিরোধের সঙ্গী পান মুশফিক। দুজনের ৮৭ রানের জুটিটাই হয়ে থাকে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যায়। মাহমুদউল্লাহ ৪১ করে ফিরে গেলেও শেষ পর্যন্ত খেলে মুশফিক নিশ্চিত করে যান বাংলাদেশের নিরাপদ পুঁজি। ২৪৬ রানের মধ্যে ১২৭ বলে ১২৫ রানই আসে তার ব্যাটে।
ওয়ানডেতে অষ্টম সেঞ্চুরিটা করতে মুশফিক ছিলেন দারুণ প্রখর। উইকেটে বাউন্ডারি মারা কঠিন দেখে দৌড়ে রান নিয়েছেন প্রচুর। প্রথম ৭০ রানে তিনি মারেন কেবল এক বাউন্ডারি। বাকি ৯টি এসেছে পরে। সেঞ্চুরির পর মেরেছেন পাঁচটি।
ধীরগতির উইকেটে তার এই ইনিংসই ঠিক করে দেয় বাংলাদেশের ঠিকানা।
২৪৭ রান তাড়ায় নেমে শুরুটা খারাপ হচ্ছিল না শ্রীলঙ্কার। তবে অধিনায়ক কুসল পেরেরাকে উইকেট, পরিস্থিতির বাছ-বিচার করতে দেখা গেল না। তার অ্যাপ্রোচ ছিল অতি আগ্রাসী। শুরুর দিকেই স্কুপের মতো শটও চেষ্টা চালিয়েছেন।
বাংলাদেশ রিভিউ না নেওয়ায় তাসকিনের বাউন্সারে একবার ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান। তবে ইনিংস লম্বা করা হয়নি। অভিষিক্ত শরিফুল ইসলামের বল লফটেড শটে উড়াতে গিয়ে ধরা পড়েন মিড অনে। ২৪ রানে প্রথম উইকেট হারায় লঙ্কানরা।
আরেক ওপেনার দানুশকা গুনাথিলেকা টিকে গিয়েছিলেন, থিতু হওয়ার পরও দ্রুত রান বাড়ানোর চাপ নিয়ে ফেলেন নিজের উপর। মোস্তাফিজুর রহমানের অনেক বাইরের বলে স্ল্যাশ করে উড়াতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন সাকিবের হাতে।
তরুণ পাথুম নিশানকাও থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। তবে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে নষ্ট করলেন সুযোগ। সাকিবের অনেক শর্ট বলে পুল করে তুলে দেন সহজ ক্যাচ। মিড উইকেট থেকে কিছুটা পেছনে সরে দ্বিতীয় চেষ্টায় ক্যাচটা ধরেন তামিম।
খানিক পর মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান কুশল মেন্ডিসও। ৭৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ম্যাচ থেকেই যেন ছিটকে যায় লঙ্কানরা।
ধনঞ্জয়া ডি সিলভা আগের ম্যাচে বাজে শটে ফিরেছিলেন, এবার সাকিবের আর্ম বল রিড করতে না পেরে কাবু হয়েছেন এলবিডব্লিউ হয়ে। তিন অঙ্কে যাওয়ার আগেই অর্ধেক ইনিংস শেষ হয়ে যায় তাদের।
দাসুন শানাকা জুটি গড়তে পারেননি। মিরাজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে উঠান সহজ ক্যাচ। আগের ম্যাচে বিস্ফোরক ইনিংস খেলা ওয়েইন্দু হাসারাঙ্গার ব্যাট এবার হাসেনি। শ্রীলঙ্কার আশা নিভতেও সময় লাগেনি।
আসেন বান্দারা, লাকসান সান্দাকানদের ছেঁটে ফেলেন মোস্তাফিজ। ৩৮ ওভারে শ্রীলঙ্কা ৯ উইকেটে ১২৬ থাকতে ফের নামে বৃষ্টি। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচের ফল জানানোর আনুষ্ঠানিকতাই কেবল বাকি। ৪০ মিনিট পর ফের খেলা শুরু হলে ৪০ ওভারে ২৪৫ করার লক্ষ্য দাঁড়ায় সফরকারীদের। অর্থাৎ ২ ওভারেই করতে হতো ১১৯! ওই দুই ওভারে তারা তুলে ১৫ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৪৮. ১ ওভারে ২৪৬ (তামিম ১৩, লিটন ২৫ , সাকিব ০ , মুশফিক ১২৫, মোসাদ্দেক ১০, মাহমুদউল্লাহ ৪১, আফিফ ১০, মিরাজ ০, সাইফুদ্দিন ১১, শরিফুল ০, মোস্তাফিজ ০* ; উদানা ২/৪৯ , চামিরা ৩/৪৪, হাসারাঙ্গা ১/৩৩, শানাকা ০/৩৮, সান্দাকান ৩.৫৪ , ধনঞ্জয়া ০/২৩ )
শ্রীলঙ্কা: ৪০ ওভারে ১৪১/৯ (গুনাথিলেকা ২৪ , পেরেরা ১৪ , নিশানকা ২০, মেন্ডিস ১৫, ধনঞ্জয়া ১০, বান্দারা ১৫ , শানাকা ১১, হাসারাঙ্গা ৬, উদানা ১৮*, সান্দাকান ৪ , চামিরা ৪*; মিরাজ ৩/২৮ , শরিফুল ১/৩০, তাসকিন ০/২৭ , মোস্তাফিজ ৩/১৬ , সাকিব ২/৩৮ , মোসাদ্দেক ০/৩)
ফল: ডি/এল মেথডে বাংলাদেশ রানে ১০৩ জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে এক ম্যাচ বাকি থাকতে বাংলাদেশ জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।