মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি কারাবন্দি নেত্রী সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নিবন্ধন বাতিলে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন জান্তা। দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার টুডের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনের (ইউনিয়ন ইলেকশন কমিশন-ইউইসি) চেয়ারম্যান থেইন সোয়ে শুক্রবার মিয়ানমার টুডেকে বলেন, ‘এনএলডির বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপি করার অভিযোগ রয়েছে। সরকারের তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে।’
‘যেহেতু আইন অনুযায়ী এই ধরণের কর্মকাণ্ড অবৈধ, তাই আমরা এনএলডির নিবন্ধন বাতিল করতে যাচ্ছি।’
মিয়ানমার টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার জান্তা সরকার দেশের সবগুলো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময় সভার আয়োজন করেছিল। ওই সভায় উপস্থিত থাকতে সবগুলো রাজনৈতিক দলকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে।
কিন্তু দেশটির সামরিক বাহিনী সমর্থিত রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও আরও দু-একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া মিয়ানমারে সক্রিয় সব রাজনৈতিক দল সেই সভা বর্জন করে।
গত বৃহস্পতিবারের ওই মতবিনিময় সভাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে মিয়ানমার টুডে।
মিয়ানমারে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারে সামরিক বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এনএলডির বেশ কয়েকজন দলছুট নেতা-কর্মীও রয়েছেন। এমন একজন মুখপাত্রের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তবে ওই মুখপাত্র তাৎক্ষনিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তারপর সেনা সমর্থিত রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির উচ্চ পর্যায়ের এক নেতার সঙ্গেও এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করে রয়টার্স; কিন্তু তিনি জানিয়েছেন, মতবিনিময় সভায় তাদের দলের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে, ওই প্রতিনিধি এ ব্যাপারে বলতে পারবেন। তিনি এখনও সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছু জানেন না।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাসীন সরকারকে হটিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী; বন্দি করা হয় মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির পার্লামেন্ট সদস্য ও অন্যান্য বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের।
এদিকে, এই অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পর থেকেই ফুঁসে ওঠেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী জনগন। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারে ব্যাপকমাত্রায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন তারা।
বিক্ষোভ শুরুর প্রথম পর্যায়ে দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আগ্রাসী হয়ে উঠতে থাকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লাঠি, রাবারবুলেট, জলকামানের পরিবর্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মিয়ানমারের কারবন্দিদের সহায়তাদানকারী বেসরকারি সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) শুরু থেকেই বিক্ষোভে নিহত ও কারাবন্দিদের বিষয়ে তথ্য রাখছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে মিয়ানামারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন আটশ’রও বেশি মানুষ, কারাবন্দি আছেন তিন হাজারেরও বেশি।
অভ্যুত্থানের পরপরই সামরিক বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন সু চি। গ্রেপ্তারের পর তাকে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছে। অবৈধ ওয়াকিটকি, ক্ষমতায় থাকাকালে ঘুষগ্রহণ ও রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচারসহ কয়েকটি অভিযোগে বর্তমানে মিয়ানমারের আদালতে বিচার চলছে তার। তবে বিচারকাজ চললেও আদালতে সশরীরে উপস্থিত করা হচ্ছে না তাকে। ভিডিও কলের মাধ্যমে ট্রায়ালে সু চিকে যুক্ত করা হচ্ছে।
এমনকি আইনজীবদের সঙ্গেও সরাসরি কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না তাকে। ভিডিও কলের মাধ্যমে নিজের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছেন সু চি।
ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বিরোধী জনতা ও রাজনৈতিকদল ও আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো জান্তা বিরোধী বাহিনী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স ও বিকল্প সরকার গঠন করেছে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত, দীর্ঘমেয়াদী গৃহযুদ্ধে প্রবেশ করতে যাচ্ছে মিয়ানমার।