ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরনটি বিশ্বের ৪৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মঙ্গলবার (১১ মে) সংস্থাটি জানায়, গত বছরের অক্টোবর মাসে ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া বি.১.৬১৭ নামে ভাইরাসের এই ধরনটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪৪টি দেশে খুঁজে পেয়েছেন তাদের বিজ্ঞানীরা।
প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর করোনার ভারতীয় ধরনকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট’ হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছিল ডব্লিউএইচও। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় চলতি সপ্তাহে ধরনটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বা ‘উদ্বেগের বিষয়’ বলে বর্ণনা করে সংস্থাটি। এর আগে করোনার ব্রিটেন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনগুলোকেও ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে উল্লেখ করেছিল ডব্লিউএইচও।
করোনার ভারতীয় এই নতুন ধরনটি তুলনামূলক বেশি সংক্রামক। শুধু তাই নয়, টিকা গ্রহণ করা ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধও ক্ষমতা কিছুটা হলেও ভাঙতে সক্ষম ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি। আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, এমন ব্যক্তিকেও আবার আক্রান্ত করতে সক্ষম ভাইরাসের ডবল মিউটেশান।
এমনকি করোনার টিকার মাধ্যমে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় সেই অ্যান্টিবডিও অনেক সময় এই ভাইরাসকে রুখতে ব্যর্থ হয়। ফলে টিকা নেওয়ার পরেও অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই বিজ্ঞানীরা ভারতের করোনার এই ধরন নিয়ে বেশি চিন্তিত।
এদিকে ভারতে শনাক্ত করোনা এই ধরনটি ছড়িয়ে পড়া দেশগুলোকে সতর্ক করেছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটি বলছে, করোনাভাইরাসের এই ধরনটি ভারতে প্রথম শনাক্ত হলেও এখন সেটা বিশ্বের ৪৪টি দেশে তা পাওয়া গেছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়াচ্ছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ কমিয়ে আনা। এ জন্য সকল দেশকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে এই ভাইরাস আরও অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
গত সোমবার ডব্লিউএইচও’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মারিয়া ভ্যান কেরখোভ বলেন, করোনার ভারতীয় ধরনটি দ্রুততার সঙ্গে সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়ে নতুন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের ফলাফলের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। তবে এই ধরনটি পুরো বিশ্বের জন্য চিন্তার কারণ।
করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতে মৃত্যুর মিছিল চলছেই। বুধবার (১২ মে) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৪২১ জন। একই সময়ের মধ্যে দেশটিতে মারা গেছেন ৪ হাজার ২০৫ জন। এতে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৭ জনে।
করোনার ভারতীয় ধরনের কারণেই প্রতিদিনই দেশটিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যাওয়ার পাশাপাশি নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: এনডিটিভি