করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে বা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় গোবার এবং গোমূত্রের কার্যকারিতা নিয়ে সতর্ক করেছেন ভারতের চিকিৎসকেরা। তাদের মতে, করোনা প্রতিরোধে গোবর কার্যকর বলে অনেকে বিশ্বাস করলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ নেই। এমনকি এতে করে তথা গোবর থেরাপি ব্যবহার করলে শরীরে অন্যান্য রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা ভারত। অক্সিজেনসহ নানাবিধ সংকটে ভেঙে পড়েছে দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থাও। হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় বেড, অক্সিজেন ও ওষুধের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
একইসঙ্গে মহামারিতে বিপর্যস্ত এই দেশটিতে যেন মৃত্যুর মিছিল চলছেই। প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক মানুষ নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও রয়েছে চার হাজারের আশপাশেই।
মঙ্গলবার (১১ মে) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৪২ জন। মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫১৭ জনে।
অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ হাজার ৮৭৬ জন। এতে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯২ জনে। তবে বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, বিশেষজ্ঞদের ধারণা- করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ভারতের সরকারের দেওয়া তথ্যের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি হতে পারে।
রয়টার্স বলছে, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের বেশ কিছু অঞ্চলের মানুষ বিশ্বাস করে যে, সপ্তাহে একদিন গোমূত্র বা গোবর শরীরে মাখলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও সুস্থ হতে সহায়ক হয়।
এছাড়া হিন্দু ধর্ম মতে- মানবজীবন ও পৃথিবীর জন্য গরু পবিত্রতার প্রতীক। বাড়িঘর পরিষ্কারের কাজে এবং ধর্মীয় প্রথা পালনে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শত শত বছর ধরে গোবর ব্যবহার করে আসছেন। তাদের বিশ্বাস, গোবরে ভেষজ এবং জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে।
একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে অ্যাসোসিয়েট ম্যানেজার পদে কাজ করেন গৌতম মনিলাল বরিসা। তার দাবি, ‘চিকিৎসকরাও এখানে গোবরে গোসল করতে আসেন। তাদের বিশ্বাস- এর মাধ্যমে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসককরা আরও বিশ্বাস করেন- গোবরে গোসল করে করোনা রোগীদের কাছে গেলে কোনো ভয়ই নেই।’
এমনকি গতবছর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গোবার ও গোমূত্র মেখে গোসল করার কারণেই তিনি সুস্থ হয়েছিলেন বলে দাবি করেন মনিলাল বরিসা।
তবে ভারতসহ সারা বিশ্বের চিকিৎসকরা কোভিড-১৯ চিকিৎসায় বিকল্প যেকোন ধরনের পন্থার ব্যাপারে মানুষকে বারবার সতর্ক করেছেন। তারা বলছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বীকৃত নয়; এমন যেকোন ধরনের ভ্রান্ত চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে শারীরিক সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়াসহ অনেক ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় কমিটির সভাপতি ড. জেএ জয়লাল বলছেন, ‘গোবর ও গোমূত্র যে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এ বিষয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। যারা এটা করেন, এটা কেবলই তাদের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব জিনিস ব্যবহারে যেকোন মানুষ জটিল স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন। এছাড়া পশুদের শরীর থেকে মানুষের শরীরে নানা রোগ-বালাই ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তো রয়েছেই।’
সূত্র: রয়টার্স