গোয়ালঘরে কোভিড কেয়ার সেন্টার। রোগীদের অ্যালোপ্যাথি ওষুধের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে আয়ুর্বেদিক ওষুধও। সেই আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে গরুর দুধ ও গোমূত্র থেকে।
‘বেদলক্ষণ পঞ্চগব্য আয়ুর্বেদ কোভিড আইসোলেশন সেন্টার’ নামে ওই কোভিড কেয়ার সেন্টারে এই মুহূর্তে রয়েছে সাতজন রোগী।
ভারতের গুজরাটের বনষ্কণ্ঠ জেলার তেতোরা গ্রামে এমন কোভিড কেয়ার সেন্টারের অবস্থান।
‘গোধাম মহাতীর্থ পথমেদা’র শাখা বনষ্কণ্ঠের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মোহন যাদব বলেন, ‘আমরা ৫ মে থেকে এই সেন্টার শুরু করেছি। মৃদু উপসর্গ যুক্ত করোনা রোগীদের ৮ রকমের আয়ুর্বেদিক ওষুধ দিয়ে আমরা চিকিৎসা করছি। এই ওষুধ তৈরি হয়েছে গরুর দুধ, ঘি ও গোমূত্র থেকে। আমরা পঞ্চগব্য আয়ুর্বেদ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করছি। তার জন্য ‘গৌতীর্থ’ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ‘গৌতীর্থ’ দেশি গরুর মূত্র থেকে তৈরি হয়। তার সঙ্গে অন্যান্য উপাদানও ব্যবহার করা হয়। সেই সঙ্গে কাশির ওষুধের জন্য আমরা মূলত গোমূত্র থেকে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করছি। গরুর দুধ থেকে তৈরি চবনপ্রাশও দিচ্ছি আমরা।’
আয়ুর্বেদিক ছাড়া অ্যালোপ্যাথি ওষুধও দেওয়া হচ্ছে সেই কেন্দ্রে, এমনটাই জানিয়েছেন মোহন। তার জন্য দুজন এমবিবিএস চিকিৎসককেও রেখেছেন তারা।
কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, একটি গোয়ালঘরে কোভিড কেয়ার সেন্টার তৈরি করা কিংবা ওষুধ হিসেবে গোমূত্রের ব্যবহার কতটা বিজ্ঞানসম্মত?
এই প্রসঙ্গে বাকুড়ার পাত্রসায়র হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার তথা আয়ুর্বেদ চিকিৎসক সমিত শূর বলেন, ‘আয়ুষ মন্ত্রাণালয় একটি ওষুধকে অনুমতি দিয়েছে, যাতে গোমূত্র বা গরুর দুধ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে শুনেছি। কিন্তু সেই সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য আমার কাছে এখনো এসে পৌঁছায়নি। না জেনে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। ট্রায়ালের মাধ্যমে কোনো ওষুধের কার্যকারিতা জানার পরেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে সেটা জানানো হবে। তখন সেই ওষুধের কথা সবাই জানতে পারবেন। তার আগে এই বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
অন্যদিকে, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নিশান্ত দেব ঘটক বলেন, ‘আয়ুর্বেদ নিয়ে আমি অবিশ্বাসী নই। কিন্তু সব কিছু পরীক্ষা ও ট্রায়ালের মাধ্যমেই সামনে আসে। যদি এই ধরনের চিকিৎসায় কেউ বিশ্বাস করেন, তাহলে অনেক সময় তারা আধুনিক চিকিৎসার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে ফল না মিললে দুই দিকেই সমস্যা হয়। সমান্তরালভাবে চিকিৎসা চলতেই পারে। এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশ্বাস করা মানে অন্য ধরনের পদ্ধতিতে অবিশ্বাস ঠিক নয়। সব কিছুই বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরেই ব্যবহার করা উচিত। অবশ্য অসুখের মধ্যে একটা মানসিক দিকও থাকে। তাই কেউ যদি মনে মনে ভাবেন তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন তার একটা ভাল প্রভাব পড়তে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ওষুধ বিনা ট্রায়ালে দেওয়া উচিত নয়।’
সূত্র : আনন্দাবাজার