মহামারি করেনায় ভারতের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দেশটিতে ক্ষমতাসীন কট্টরপন্থী বিজেপি সরকারকে দায়ী করেছে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিখ্যাত পত্রিকা ল্যানসেট। পত্রিকাটি বলছে, বর্তমানে ভারতের যে করোনা পরিস্থিতি তা মোদি সরকারের নিজের তৈরি করা। দেশটি চাইলে এই পরিস্থিতি এড়াতেও পারতো। পত্রিকাটি এটাকে ‘ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ’ বলেও মন্তব্য করেছে।
নিজেদের সম্পাদকীয়তে প্রথম অনুচ্ছেদেই ভারতের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে ল্যানসেট লিখেছে, ‘ভারতে ভয়ঙ্কর করোনা-পরিস্থিতির মধ্যেও সংক্রমণ ঠেকানোর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার থেকে সমালোচনামূলক টুইট সরাতে বেশি আগ্রহ ছিল মোদি সরকারের। আর তাই দেশের এই পরিস্থিতিতে মোদি সরকারের ভূমিকা ও দেশবাসীর প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের এই মনোভাব ‘ক্ষমার অযোগ্য’।
চিকিৎসা সংক্রান্ত এই পত্রিকাটি নরেন্দ্র মোদি সরকারের সরাসারি সমালোচনা করে লিখেছে, ‘বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও সরকার ধর্মীয় উৎসব পালন এবং রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের মতো অতি সংক্রামক অনুষ্ঠান হতে দিয়েছে। এই ধরনের অতি সংক্রামক বা সুপার স্প্রেডার অনুষ্ঠানই বিপদ ডেকে এনেছে ভারতে। সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেওয়া এবং খোলা মনে পরামর্শ নিতে না চাওয়ার সরকারি মনোভাবই ভারতের সংকট বাড়িয়েছে, যা কোনো ভাবেই ক্ষমা করা যায় না।’
গত কয়েক দিন ধরেই ভারতের দৈনিক সংক্রমণ ৪ লাখের ওপরে রয়েছে। ল্যানসেট বলছে, ‘করোনা মোকাবিলায় মোদি সরকার তার প্রথম দফার সাফল্যকে তছনছ করে দিয়েছে।’
পত্রিকাটি আরো বলছে, ‘ভারত সরকার করোনা মোকাবিলার জন্য প্রথম পর্যায়ে যে টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছিল, এপ্রিল মাসের আগে বেশ কয়েক মাস যাবৎ তারা কোনো বৈঠকই করেনি।’
ফলে ভারতের করোনা পরিস্থিতিকে মোদি সরকারের নিজের তৈরি করা সংকট উল্লেখ করে ল্যানসেট বলছে, ‘চাইলে এই সংকট এড়ানো যেত। কিন্তু মোদি সরকারের ভুল স্বীকার করতে না চাওয়ার মনোভাবই সমস্যা এতোটা বাড়িয়ে দিয়েছে।’
ভারতের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ল্যানসেটের বক্তব্য, ‘দেশের হাসপাতালগুলোতে বেড নেই। গোটা দেশের শ্মশানগুলোতে গণচিতা জ্বলছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা টানা কাজ করে ও করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিধ্বস্ত। ভারতের এই দুর্যোগ সত্যিই অবর্ণনীয়।’
তবে এই পরিস্থিতির থেকে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির মুক্তির উপায়ও বলা হয়েছে জার্নালটির সম্পাদকীয়তে। জার্নালটি বলছে, দেশের কথা ভেবে মোদি সরকার যদি নিজেদের ভুল না শুধরে নেয়, তাহলে কিছু করার নেই। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই করোনা মোকাবিলায় পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিতে হবে ভারতকে।
করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতের অবস্থা যেন বর্ণনারও অতীত। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দেশটিতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে চার হাজারের ঘর। অন্যদিকে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাও রয়েছে চার লাখের ওপরে।
রোববার (৯ মে) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৩৮ জন। যা শনিবারের তুলনায় প্রায় ২ হাজার বেশি। সর্বশেষ এই পরিসংখ্যান নিয়ে মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৪ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ হাজার ৯২ জন। এতে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৩৬২ জনে।