‘রাষ্ট্রীয় জলসীমা এবং সামুদ্রিক অঞ্চল আইন-২০২১’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার (৩ মে) মন্ত্রিসভার বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত আইনটির খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগের আইনে সামুদ্রিক দূষণের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড শাস্তির বিধান ছিল। তবে সংশোধিত আইনে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বনিম্ন দুই কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক সম্পদের ওপর বাংলাদেশের মানুষের সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে ‘রাষ্ট্রীয় জলসীমা এবং সামুদ্রিক অঞ্চল (আইন)-১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন।
পরবর্তী সময়ে, ১৯৮২ সালে ইউনাইটেড কনভেনশান অন দ্যা ল অফ দ্যা সি (আনক্লস, ১৯৮২) জাতিসংঘে পাস হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক আইনসমূহ এবং সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত মামলার রায়সমূহের যথাযথ প্রতিফলনের জন্য ‘রাষ্ট্রীয় জলসীমা এবং সামুদ্রিক অঞ্চল আইন -১৯৭৪’ অধিকতর সংশোধনপূর্বক ‘রাষ্ট্রীয় জলসীমা এবং সামুদ্রিক অঞ্চল আইন-২০২১’-এর খসড়া তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ করা হয়।
সংশোধিত আইনে ৩৫টি ধারা রয়েছে, যার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-
১) পুরাতন আইনটি যুগোপযোগী করার নিমিত্তে আধুনিক মেরিটাইম সংক্রান্ত বিষয়াবলি ও প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২) বিদেশি জাহাজ বা ডুবোজাহাজের বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ফৌজদারি এখতিয়ার ও দেওয়ানি এখতিয়ার উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৩) পূর্বের আইনের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সংজ্ঞা ও সীমা আনক্লস, ১৯৮২- এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধন করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ব্যাপ্তি ১৮ থেকে ২৪ মাইল করা হয়েছে।
৪) আনক্লস, ১৯৮২ -তে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উল্লেখ থাকায় প্রস্তাবিত আইনে অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিবর্তে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ব্যবহার করা হয়েছে এবং এতে সকল প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
৫) পূর্বের আইনে অঞ্চল এবং গভীর সমুদ্র সংক্রান্ত কোনো ধারা না থাকায় সম্পদ আহরণ, উত্তোলন ও জাহাজ পরিচালনার অধিকার ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৬) মহীসোপানের সংজ্ঞা ও সীমা আনক্লস, ১৯৮২ এবং আন্তর্জাতিক আদালতের মামলার রায় অনুযায়ী সংশোধন করা হয়েছে এবং এ অঞ্চলে নিরাপদ জোন নির্ধারণ, সাবমেরিন কেবল ও পাইপলাইন স্থাপন সংক্রান্ত বিধানাবলি সংযোজিত হয়েছে।
৭) সংশোধিত আইনে সমুদ্রশাসন, ব্লু ইকোনোমি, মেরিটাইম সহযোগিতা সংক্রান্ত নির্দেশনামূলক বিধিবিধান সংযোজিত হয়েছে এবং বিশেষ করে মেরিটাইম বিজ্ঞান গবেষণা পদ্ধতি ও অনুশাসন সংক্রান্ত বিধানাবলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৮) পূর্বের আইনে সামুদ্রিক দূষণের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড শাস্তির বিধান ছিল যা সংশোধিত আইনে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বনিম্ন দুই কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
৯) এতদিন চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজে যে সকল চুরি সংঘটিত হত তা জলদস্যুতার ঘটনা হিসেবে লিপিবদ্ধ হত। সংশোধিত আইনে জলদস্যুতার সুস্পষ্ট সংজ্ঞা প্রদানপূর্বক এ সব অপরাধ সংক্রান্ত বিধিবিধান সংযোজন করা হয়েছে।
১০) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জলসীমা দিয়ে অন্য দেশের জাহাজ ও ডুবোজাহাজের নির্দোষ অতিক্রমণ সংক্রান্ত বিস্তারিত ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
১১) জলদস্যুতার নিমিত্তে ব্যবহৃত জাহাজে পরিদর্শন, আরোহণ, জব্দ, সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং গ্রেফতার সংক্রান্ত বিধিবিধান সংযুক্ত করা হয়েছে।
১২) অভ্যন্তরীণ জল এবং রাষ্ট্রীয় জলসীমাতে নিউক্লিয়ার অথবা বিপজ্জনক পরিত্যক্ত জিনিস নিক্ষেপ করার জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
১৩) বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহীসোপান এবং মহীসোপান অঞ্চলে কোনো বিদেশি জাহাজ বা ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ বা এতদ অঞ্চলের বিধিবিধান ভঙ্গের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
১৪) সমুদ্রে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয় তা ভিন্নমাত্রিক হওয়ায় পৃথক মেরিটাইম ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া, অনেক ক্ষেত্রে সমুদ্রে সংঘটিত অপরাধ বা দুর্ঘটনার সাক্ষী পাওয়া যায় না। এ কারণে অনেক অপরাধের সঠিক বিচার হয় না। তাই এ ধরনের অপরাধ বা দুর্ঘটনা সংক্রান্ত ভিডিও, ছবি বা ইলেকট্রনিকস রেকর্ডকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার বিধান সংযোজন করা হয়েছে।