‘লিটন ও মিরাজ যদি প্রথম সেশন কাটিয়ে দেয়, তাহলে ভালো কিছু চিন্তা করতে পারবো।’ – হারের খুব কাছে থেকেও লিটন ও মিরাজের থেকে বড় প্রত্যাশা করছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
কিন্তু লিটন ও মিরাজ কেউই পারেননি ম্যাচ বাঁচাতে। পারেননি তাসকিন, তাইজুল, রাহীরাও। পঞ্চম দিনের সকালের সেশনেই শেষ পাল্লেকেলে টেস্ট। প্রভীন জয়াবিক্রমার বিক্রমে দ্বীপরাষ্ট্রে আরেকটি বিব্রতকার হার সঙ্গী হলো বাংলাদেশের।
জয়ের জন্য ৫ উইকেটের দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। বাংলাদেশের ২৬০। হাতে ৫ উইকেট রেখে টেস্টের পঞ্চম দিনে ম্যাচ বাঁচানোর চিন্তা কঠিন। পারেনি বাংলাদেশ।
৫০ রান যোগ করে বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছে ২০৯ রানে। প্রথম ইনিংসে ২৫১ রান বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট ২২৭ রানে। দারুণ জয়ে ১-০ ব্যবধানে ‘ওয়ালটন শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ সিরিজ’ জিতেছে দিমুথ করুনারত্নের দল।
প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া প্রভীন জয়াবিক্রমা দ্বিতীয় ইনিংসে নিলেন ৫ উইকেট। ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে তিনি ম্যাচসেরা। পাশাপাশি অভিষেকে শ্রীলঙ্কার হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার কীর্তিও গড়েছেন। ৪২৮ রান করে সিরিজ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক করুনারত্নে।
এই টেস্টেই অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার প্রভীন জয়াবিক্রমার সঙ্গে অফস্পিনার রমেশ মেন্ডিসের জুটি প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও নাকাল করে ছাড়ছে বাংলাদেশকে। উইকেট থেকে পাওয়া টার্ন ও বাউন্স কাজে লাগিয়ে সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ছেন এই লঙ্কান স্পিনার।
ম্যাচ শেষে মুমিনুল জানালেন, প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতা ডুবিয়েছে দলকে। ম্যাচের ৫০ শতাংশ সেখানেই শেষ। ইনিংসের শুরুটা আশা জাগানিয়া হলেও মধ্য ও শেষ ভাগে তালগোল পাকিয়ে ৩৭ রানে ৭ উইকেট হারায় অতিথিরা।
দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল দায়িত্বজ্ঞানহীন। নুন্যতম লড়াইয়ের মানসিকতা ছিল না। দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকা বা মাটি কামড়ে পড়ে থাকার কোনো চেষ্টাই ছিল না। তাতে ম্যাচের এপিটাফ লিখে দেন ব্যাটসম্যানরাই। পঞ্চম দিনেও লড়াইয়ের কোনো ছাপ ছিল না। লিটন জয়াবিক্রমার সোজা বল মিস করে এলবিডব্লিউ হন দিনের তৃতীয় ওভারে।
নতুন ব্যাটসম্যান তাইজুলকে সঙ্গে মিরাজ খানিকটা আশা দেখান। ৬৬ বল কাটিয়ে দেন ২২ গজে। তাদের জুটি ভাঙেন অফস্পিনার ধনাঞ্জয়া। কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তাইজুল। এরপর তাসকিন ও মিরাজের জুটি ৫১ বলের। সেই জুটি ভাঙে তাসকিনের বাজে শটে।
মেন্ডিসের ঘূর্ণি বল উড়াতে গিয়ে টাইমিং গড়বড় করে মিডঅফে ক্যাচ দেন। পরের ৮ বলে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। বাঁহাতি স্পিনার মিরাজ ও রাহীর উইকেট নিয়ে অভিষেক রাঙান ১১ উইকেট নিয়ে। ১৬তম বোলার হিসেবে অভিষেকে ১০ উইকেটের বেশি নিয়েছেন জয়াবিক্রমা। তার বিক্রমেই স্রেফ এলোমেলো বাংলাদেশ শিবির।
১০ টেস্টে ৯ হারের রেকর্ডকে সঙ্গী করে পাল্লেকেলেতে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট ড্রয়ের পর দীর্ঘদিন পর ভালো কিছু উপহার দেন ক্রিকেটাররা। দ্বিতীয় টেস্টে সেই একই হাল। তালগোল পাকানো পারফরম্যান্সে আরেকটি বিব্রতকার হার সঙ্গী মুমিনুল, মুশফিক, তামিমরা।
শ্রীলংকা ১ম ইনিংস : ৪৯৩/৭ ডি. (১৫৯.২ ওভারে), করুণারত্নে ১১৮,থ্রিমানে ১৪০,ওসাডা ফার্নান্ডো ৮১, ম্যাথুউজ ৫, ধনঞ্জয় ২, নিশাঙ্কা ৩০, রমেশ মেন্ডিজ ৩৩,ডিকভেলা ৭৭* রাহি ২২-৪-৬৯-০,তাসকিন ৩৪.২-৭-১২৭-৪,মিরাজ ৩৬-৭-১১৮-১,শরীফুল ২৯-৬-৯১-১,তাইজুল ৩৮-৭-৮৩-১।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ২৫১/১০ (৮৩.০ ওভারে), তামিম ৯২, সাইফ ২৫,শান্ত ০, মুমিনুল ৪৯,মুশফিক ৪০, রমেশ মেন্ডিজ ৩১-৭-৮৬-২,জয়াবিক্রমা ৩২-৭-৯২-৬,লাকমাল ১০-০-৩০-২।
শ্রীলংকা ২য় ইনিংস :১৯৪/৯ ডি. (৪২.২ ওভারে), করুণারত্নে ৬৬,থ্রিমানে ২,ওসাডা ১, ম্যাথুউজ ১২, নিশাঙ্কা ২৪ ডিকভেলা ২৪, রমেশ মেন্ডিজ ৮, লাকমাল ১০,জয়াবিক্রমা ৩ঁ,মিরাজ ১৪-৩-৬৬-২,শরিফুল ১-০-৮-০,তাইজুল ১৯.২২-৭২-৫,,তাসকিন ৪-০-২৬-১,সাইফ হাসান ৪-০-২২-১।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ২২৭/৫ (৭১.০ ওভারে), তামিম ২৪,সাইফ ৩৪, শান্ত ২৬, মুমিনুল ৩২, মুশফিক ৪০, লিটন ১৭, মিরাজ ৩৯, তাইজুল ২,তাসকিন ৭,শরিফুল ০*,রাহি ০,লাকমাল ৪-২-১৪-০,রমেশ মেন্ডিজ ২৮-২-১০৩-৪, জয়াবিক্রমা ৩২-১০-৮৬-৫,ধনঞ্জয় ৭-১-১৯-১ ।
ফল : বাংলাদেশ ২০৯ রানে পরাজিত।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : জয়াবিক্রমা (শ্রীলংকা)।