করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে লেজেগোবরে অবস্থা ভারতের। এরই মধ্যে দৈনিক আক্রান্ত সংখ্যা চার লাখে পৌঁছেছে। যা বিশ্বে এক দিনে আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড। তাছাড়া প্রতিদিনই দেশটিতে তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অক্সিজেন ও হাসপাতালে শয্যার জন্য হাহাকার চলছে। অন্য রাজ্যগুলোর মতো পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এর মধ্যে বিধান সভার নির্বাচন হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গে। এতে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আট লাখ ২৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা পুরো পাকিস্তানে আক্রান্তের চেয়েও বেশি। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছে আট লাখ ২৫ হাজার। আর বাংলাদেশে এই সংখ্যা এখনো আট লাখে পৌঁছায়নি। অর্থাৎ ভারতের অন্য রাজ্যগুলোর মতোই পশ্চিমবঙ্গ এখন করোনায় বিপর্যস্ত। কিন্তু এ পরিস্থিতিতেও রাজ্যে লকডাউন বা কারফিউ ঘোষণার কথা ভাবছে না মমতা ব্যানার্জির রাজ্য সরকার। তবে শুক্রবার রাত থেকে কড়াকড়ি আরোপের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। একইসাথে বেশ কিছু নিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে।
জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাজ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব সিনেমা হল, শপিং মল, বিউটি পার্লার, রেস্তরাঁ, বার, ক্রীড়াঙ্গন, জিম, স্পা ও সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওষুধ বা মুদিদোকান খোলা থাকলেও অন্যান্য দোকানপাট ও বাজার সকাল এবং বিকেলে কিছুক্ষণের জন্য খোলা রাখা যাবে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা মেনে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত একটি বিধিনিষেধ প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ কর্তৃপক্ষ। এ নির্দেশনা লঙ্ঘন হলে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে বলেও জানানো হয়েছে আদেশে।
অনেকের মতে, ভোট মিটতেই যে ভাবে কড়া পদক্ষেপ করা হলো, তাতে ২ মে ফলাফলের পর রাজ্য আরো বেশি কড়াকড়ি আরোপ করবে। প্রয়োজন হলে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙার জন্য রাতে কারফিউ জারি করা হতে পারে।
প্রকাশিত নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাজার-হাট শুধুমাত্র খোলা থাকবে সকালে ৭টা থেকে ১০টা ও বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। যদিও ওষুধের দোকান ও মুদিদোকানের মতো জরুরি পরিষেবা এই নির্দেশিকার আওতার বাইরে থাকছে। সিনেমা হল, শপিং মল, বিউটি পার্লার, রেস্তরাঁ, বার, ক্রীড়াঙ্গন, জিম, স্পা ও সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ থাকলেও হোম ডেলিভারি বা অনলাইন পরিষেবায় অনুমোদন রয়েছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও বিনোদনমূলক সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভোটগণনা ও ফল প্রকাশের পর সমস্ত মিছিল ও বিজয় উৎসবের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা মানার কথা বলা হয়েছে ওই নির্দেশনায়।
২৪ ঘণ্টায় মৃত ৯৬, নতুন আক্রান্ত ১৭ হাজারের বেশি
এ দিকে শুক্রবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১০০ জনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। শুক্রবার রাতে রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৯৬ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যা দৈনিক মৃত্যুর নিরিখে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কলকাতায় এক দিনে মারা গেছে ২৮ জন। এই সংখ্যাও এ পর্যন্ত রাজ্যের রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টার সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি এ সময় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যাও টানা দ্বিতীয় দিন ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে আট লাখ ২৮ হাজার ৩৬৬ জন। আর সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত মমতার রাজ্যে ১১ হাজার ৩৪৪ জন কোভিডে মারা গেছে।
অবশ্য আক্রান্তে পাকিস্তানের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে বেশি হলেও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের চেয়ে এই সংখ্যা কম। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার প্রায়। আর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৪৫০ জন।
সূত্র : ওয়ার্ল্ডোমিটার ও আনন্দবাজার পত্রিকা