বার্সেলোনার সামনে সহজ সুযোগ ছিল শীর্ষে যাওয়ার। জিতলেই পয়েন্ট তালিকায় চূড়ায়, শিরোপা সম্ভাবনাও হবে জোরালো। এমন সমীকরণ সামনে রেখে গ্রানাদার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল লিওনেল মেসির দল। শুরুটাও দলের প্রাণভোমরা মেসির গোলে হয়েছিল রঙিণ। তবে দ্বিতীয়ার্ধে অল্প সময়ে পাল্টে গেল পুরো চিত্র। পাল্টা-আক্রমণে দারুণ দুটি গোলে অসাধারণ এক জয় নিয়ে ফিরল গ্রানাদা। পঁচা শামুকে পা কেটে শিরোপা স্বপ্ন ফের ধূসর হয়ে গেল রোনাল্ড কুমানের দলের।
বৃহস্পতিবার রাতে ক্যাম্প ন্যুতে লা লিগার ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে গ্রানাদা। দারউইন মার্চিস সমতা টানার পর ব্যবধান গড়ে দেন হোর্হে মোলিনা। ক্লাসিকোয় হারের পর টানা দুই জয় ও শিরোপা লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো পয়েন্ট হারানোয় শিরোপা ভাগ্য নিজেদের হাতে পেয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু এই ব্যর্থতার পর আবারও তা চলে গেল অ্যাটলেটিকোর হাতে। নতুন মোড় নিল জমে ওঠা লা লিগার মুকুটের লড়াই।
পুরো ম্যাচে ৮০ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশে ১৬টি শট নেয় বার্সেলোনা, যার চারটি ছিল লক্ষ্যে। আর গ্রানাদার ছয় প্রচেষ্টার মাত্র দুটি লক্ষ্যে এবং দুটিই খুঁজে পায় ঠিকানা। লিগ টেবিলে সেই আগের মতোই তিন নম্বরে রইলো কুমানের দল। শীর্ষে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, দুইয়ে রিয়াল মাদ্রিদ।
অনেক পাওয়ার হাতছানিতে মাঠে নামা বার্সেলোনা শুরু থেকে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে। বরাবরের মতো বল দখলে আধিপত্য করলেও আক্রমণে তেমন সুবিধা করতে পারছিল না তারা। ম্যাচের ১৯তম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় বার্সেলোনা। তবে মেসির পাস ধরে দুর্বল নিচু শট নেন গ্রিজমান। চার মিনিট পর এই দুজনের দারুণ বোঝাপড়ায় এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
ডি-বক্সের বাইরে গ্রিজমানকে পাস দিয়ে দ্রুত ভেতরে ঢুকে পড়েন মেসি। সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষের একজনকে এড়িয়ে বল ধরার ফাঁকেই ফরাসি ফরোয়ার্ড দারুণভাবে শরীরটা ঘুরিয়ে ফিরতি পাস বাড়ান। আর বল ধরে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন আর্জেন্টাইন তারকা। রেকর্ড সাতবারের পিচিচি ট্রফি জয়ী মেসি এবারও ছুটছেন লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পথে। এই নিয়ে তার গোল হলো ২৬। পাঁচ গোল কম নিয়ে দুইয়ে রিয়াল মাদ্রিদের করিম বেনজেমা।
ব্যবধান বাড়তে পারতো ৩৬তম মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে সের্হিও বুসকেতসের থ্রু বল অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। সামনে একমাত্র বাধা ছিল গোলরক্ষক। কিন্তু সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। এগিয়ে গিয়ে পা বাড়িয়ে ঠেকিয়ে দেন আরন এসকানদেল।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটে সামুয়েল উমতিতির কাটব্যাক পেনাল্টি স্পটের কাছে ফাঁকায় পেয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন গ্রিজমান। রক্ষণ জমাট রেখে প্রতি-আক্রমণে সাফল্যের সন্ধানে ছিল গ্রানাদা। ৬৩তম মিনিটে এ কৌশলেই সমতা টানে তারা। মাঝমাঠ থেকে আসা বলে পা লাগিয়েও ঠেকাতে পারেননি অস্কার মিনগেসা। উল্টো তাতে সুবিধা হয় মার্চিসের। গতি কমে আসা বল প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে জোরালো শটে টের স্টেগেনকে পরাস্ত করেন ভেনেজুয়েলার এই ফরোয়ার্ড।
গোল হজম করায় ডাগআউটে বেশ ক্ষুব্ধ দেখা যায় কুমানকে। খানিক পরেই কোনো এক বিষয়ে মন্তব্য করায় তাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। ৭৮তম মিনিটে সুযোগ আসে পিকের সামনে। তবে, গ্রিজমানের পাস গোলমুখে পেয়ে পিকের ব্যাকহিল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটেই পিছিয়ে পড়ে বার্সেলোনা। বাঁ দিক থেকে আদ্রিয়ান মারিনের ক্রস ডি-বক্সে পেয়ে ঠান্ডা মাথায় একটু নিচু হয়ে কোনাকুনি হেডে স্কোরলাইন ২-১ করেন বদলি নামা ৩৯ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড মোলিনা। জায়গা থেকে নড়ার সুযোগ পাননি টের স্টেগেন। রক্ষণেও আশে পাশে দেখা যায়নি কাউকে! বাকি সময়ে মরিয়া চেষ্টা চালালেও উল্লেখযোগ্য কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি বার্সেলোনা। মাঠ ছাড়ে আসরে ষষ্ঠ হারের তেতো স্বাদ নিয়ে।
৩৩ ম্যাচে ২২ জয় ও পাঁচ ড্রয়ে বার্সেলোনার পয়েন্ট ৭১। সমান পয়েন্ট নিয়ে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে রিয়াল। অ্যাটলেটিকোর পয়েন্ট ৭৩। শিরোপা লড়াইয়ে আছে সেভিয়াও, ৭০ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে আছে তারা। বার্সোকে ভড়কে দেয়া গ্রানাদা ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে আছে আট নম্বরে।