বয়স মাত্র ১২। এ বয়সে খেলাধুলা ও পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ক্লাসে পড়াশোনা বন্ধ হলেও চলছে অনলাইনে। এ সময়টি নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে পার করলে কারও কারও জন্য হয়ে উঠেছে সুবর্ণ সময়। এ সময়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বইবিমুখ। মুঠোফোন আর গেমস নিয়ে শিশুশিক্ষার্থীরা ব্যস্ত। চিন্তিত মা–বাবা। কিন্তু এ সময়কে কাজে লাগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ১২ বছরের মাইক উইমার। এ সময়ে গত এক বছর সে বাসায় বসে অতিরিক্ত ক্লাস করেছে। ফলও পেয়েছে। একই সঙ্গে এক সপ্তাহে হাইস্কুল ও কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করে ফেলেছে সে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, চার বছরের স্কুল কোর্স মাত্র এক বছরে শেষ মাইকের। দুই বছরের হাইস্কুল কোর্স এবং দুই বছরের অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রি কোর্স করে ফেলেছে করোনার মহামারি সময়ে। আগামী ২১ মে মাইক রোয়ান-ক্যাবারাস কমিউনিটি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশনের ডিগ্রি করবে। তার জিপিএ ৪। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২৮ মে কনকর্ড একাডেমি হাইস্কুল থেকেও পড়াশোনা শেষ করে সনদ পাবে সে। এখানে তার জিপিএ ৫.৪৫।
তবে মাইক উইমারের পরিকল্পনা কিন্তু এমনটা ছিল না। সে বলেছে, এ সময়ে একাধিক (ডবল) ক্লাস করা সম্ভব এবং সে মনে করে, এটা তার করা উচিত।
এখন মাইক তার ক্লাসের সহপাঠীদের থেকে কয়েক বছরের ছোট। উইমার বলেছে, তাদের সঙ্গে সে ভালোভাবে মিশে চলতে পারবে। তাকে গত বছর হোমকার্মি কোর্টে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। উইমারের আগ্রহ রোবোটিকসে। সে গণিত ও বিজ্ঞানপিপাসু। প্রযুক্তির প্রতি তার সব সময় ঝোঁক ছিল। এখনো আছে। মাত্র দেড় বছর বয়সে প্রথম আইপ্যাড হাতে পায় মাইক। সে বিস্মিত হয়ে হয়। মজে যায় আইপ্যাডে। কীভাবে কাজ করে আইপ্যাড, তা ভেবে সে বিস্মিত হয়ে যায়। এরই মধ্যে নিজের ওয়েবসাইট ‘নেক্সট এরা ইনোভেশনস’ চালু করেছে। সেই ওয়েবসাইটে মাইক সম্পর্কে বলা হয়েছে, সে কীভাবে শিখেছে তার সব রকম প্রোগ্রামিং এবং রোবটবিষয়ক শিক্ষা। একই সঙ্গে সে চালু করেছে তার নিজস্ব স্টার্টআপ, যার নাম ‘রিফ্লেক্ট সোশ্যাল’। গৃহকর্মে প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, তা জানা এবং অন্যদের সাহায্য করে এ স্টার্টআপ। মাইক বলে, ‘আমার উদ্যোক্তা হওয়ার লক্ষ্য এটাই যে এমন প্রযুক্তি তৈরি করা, যা মানুষের জীবনকে আরও উন্নত করে ভালো জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুলতে পারে।’
১২ বছর বয়সী এই বিস্ময়বালকের মা–বাবা বলেছেন, ছেলেকে নিয়ে তারা গর্বিত। মা মেলিসা উইমার বলেন, ইউমারের সামনের একটি দরজা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সে অন্য পথ খোঁজে। তবু সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাবে।
আর মাত্র কয়েক দিন পরই হবে গ্রাজুয়েশন। উইমার বলেছে, তার এখন লক্ষ্য সামনে আরও নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করা।
এখন অবশ্য মাইকের সুসময় চলছে। চারপাশের সবাই প্রশংসা করছে। দেশে ও দেশের বাইরে থেকে অনেকেই তার স্টার্টআপে সহায়তা করতে চায়। ফেলোশিপও দিতে চাচ্ছে কেউ কেউ। কিন্তু সে এত সব আপতত চায় না। সে চায়, মানুষ তাকে শিশু হিসেবেই জানুক। সে অন্য শিশুদের মতোই বাস্কেটবলসহ নানা খেলাধুলা নিয়েই থাকতে চায়। সে বলে, ‘অনেকে ভাবে, আমি আমার শৈশব খুইয়েছি। আমি তাদের বলতে চাই, শিশুর জীবন কাটানোর জন্য সময় আমার আছে। আমি তা করিও।’