২০২১ অস্কার মঞ্চে ইতিহাস গড়েছেন চিনা পরিচালক ক্লোয়ি ঝাও। অস্কারের ৯৩ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় মহিলা এবং প্রথম এশিয় মহিলা হিসাবে সেরা চিত্র পরিচালকের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, এ বছর সেরা ছবির পুরস্কারও উঠেছে ‘নোম্যাডল্যান্ড’ -এর পরিচালক ক্লোয়ির হাতেই। ক্লোয়ি ঝাও-এর এই ঐতিহাসিক সাফল্যে উচ্ছ্বাসে ভাসছে গোটা এশিয়া। প্রশংসা বর্ষণ চলছে মার্কিন, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে। অথচ জন্মসূত্রে যে দেশের মানুষ ক্লোয়ি সেই দেশই জানেনা তার এই সাফল্যের গাঁথা। কারণ চিনের সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশই করা হয়নি!
বলাই বাহুল্য চিনের সংবাদমাধ্যম পুরোপুরি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত। তাই সোমবার চিনের সংবাদ এজেন্সি জিনহুয়া, জাতীয় ব্রডকাস্টার সিসিটিভি এবং কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলি-তে একটা শব্দও খরচ করা হয়নি ক্লোয়ি ঝাও-কে নিয়ে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই সম্পর্কিত সমস্ত পোস্ট ব্লক হয়েছে। এমনকি অস্কারের লাইভ স্ট্রিমিং যাতে ভিপিএনের মাধ্যমেও দেখা না যায় তা নিশ্চিত করেছিল বেজিং।
প্রশ্ন উঠেছে কেন এই পরিচালকের উপর এতো রোষ বেজিং-এর? জানা গিয়েছে মাস খানেক আগেই ক্লোয়ির এক পুরোনো ইন্টারভিউ নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল চিনে। ২০১৩ সালের সেই সাক্ষাত্কারে এই পরিচালক বলেন “চিন এমন একটা দেশ যেখানে সবর্ত্রই মিথ্যা চোখে পড়বে”। যদিও ক্লোয়ি সেই বিতর্কের সাফাই দিয়ে বলেন তার মন্তব্যের ভুল ব্যাখা হয়েছে।
অন্যদিকে ক্লোয়ির এই ঐতিহাসিক জয় বেশ কিছু প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে মার্কিন-চিন সম্পর্ক নিয়েও। অনেকেই এই জয়ের আড়ালে রাজনীতির রং খুঁজে পাচ্ছেন। জন্মসূত্রে চিনা ক্লোয়ি ১৫ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে যান উচ্চশিক্ষার জন্য, এরপর মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেন। কিন্তু সেখানেও ‘ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালক’ হিসাবেই ছবি বানান ক্লোয়ি। অস্কার জয়ের পর মঞ্চে বক্তব্য রাখবার সময়েও চিনের নাম শোনা যায়নি তার মুখে।
পাশাপাশি চলচিত্র বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ক্লোয়িকে পুরস্কৃত করবার মাধ্যমে বর্ণ বিদ্বেষ নিয়ে নিজেদের দীর্ঘদিনের দুর্নাম ঘোচাতে চাইছে অ্যাকাডেমি। অস্কার তালিকায় লিঙ্গবৈষম্যের মত অভিযোগ উঠেছে বার বার। প্রশ্ন উঠেছে, তাই কী অভিযোগ ঘোচাতেই ক্লোয়িদের পুরস্কৃত করেছে অ্যাকাডেমি আওয়ার্ডস কর্তৃপক্ষ? যদিও অনেকেই মনে করছেন যোগ্যতাতেই সেরার পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছেন ‘নোম্যান্ডল্যান্ড’ পরিচালক। সেখানে অন্য কোনও প্রসঙ্গ টানা অমূলক বলেই মনে করছেন তারা।