ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী করে নির্বাচন কমিশনকে ‘খুনির’ সঙ্গে তুলনা করে ভর্ৎসনা করেছে তামিলনাডু রাজ্যের মাদ্রাজ হাইকোর্ট। আদালত জানিয়েছে, কমিশন আগেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ভারতের আজ এই অবস্থা।
করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদিসহ শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা নিয়মিত জনসভা করে গেছেন। হাজার হাজার মানুষের মধ্যে হাতেগোনা কয়েক জনের মুখে মাস্ক দেখা গেছে। নির্বাচনী সভা নিয়ে কমিশনের ‘গা ছাড়া’ মনোভাব নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল।
সোমবার নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করে মাদ্রাজ হাইকোর্ট কোভিডে এত মানুষের মৃত্যুর জন্য কার্যত কমিশনকেই দায়ী করলো। বিধিনিষেধ মানা নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা না নিতে পারণে ২ মে ভোটগণনা আটকে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত দুই সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ কথা বলেছেন। এই বেঞ্চের অন্য সদস্য হলেন বিচারপতি সেন্থিল কুমার রামমূর্তি। উল্লেখ্য, আগামী ২ মে তামিলনাড়ুর কারুর কেন্দ্রে ভোটগণনা।
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আজকের এই পরিস্থিতির জন্য আপনারাই দায়ী। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে রাজনীতিকরা জনসভা করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। আপনাদের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হওয়া উচিত।’
ডিভিশন আরও বেঞ্চ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অথচ দুঃখের বিষয়, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকেই, এই গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে। বেঁচে থাকলে তবেই তো গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পারবেন মানুষ।’
রাজনীতিকদের জনসভা করার অনুমতি কেনো দেওয়া হল, তা নিয়ে কমিশনকে একহাত নেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে বেঁচে থাকা এবং নিরাপদে থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাকি সবকিছু পরের বিষয়। যখন একের পর এক সভা হচ্ছিল, তখন কি আপনারা অন্য কোনও গ্রহে ছিলেন?’
আসন্ন ভোটগণনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক গণনা কেন্দ্রে কোভিডবিধি মেনে চলতে হবে। নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। বজায় রাখতে হবে পরিচ্ছন্নতা। ভোটকর্মীদের মাস্ক পরা যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনই সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে। তবেই গণনা করতে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে রাজ্য স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।’
এসব ভোটগণনা কেন্দ্রে কোভিডবিধি অনুযায়ী কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তার পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। তাতে যদি আদালত সন্তুষ্ট হয়, তবেই ২ মে গণনা করতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আদালত।’
ভারতের পাঁচ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, কেরালা, তামিলনাড়ু ও পদুচেরির বিধানসভা নির্বাচনের ভোট চলছে। এই পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে গত ৬ এপ্রিল আসাম, কেরালা, তামিলনাড়ু, আর পদুচেরির নির্বাচন শেষ হয়। পশ্চিমবঙ্গে সোমবার সপ্তম দফায় ভোট দিচ্ছে মানুষ। আগামী ২৯ এপ্রিলের অষ্টম দফার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে ভোট শেষ হবে। ২ মে একযোগে ৫ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে।